বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি সত্তর দশক থেকে বাংলাদেশের ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় করছেন। তিনি তার অভিনীত সিনেমা গুলোর মধ্যে দিয়ে দর্শক মাঝে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে দিয়ে তিনি সফলতার শীর্ষ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি প্রায় ৩০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের শিল্পী সমিতিতে নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচন প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জানালেন তিনি নিজেই।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে মাসখানেক ধরেই গুঞ্জন, সভাপতি পদে দেখা যাবে বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চনকে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন, অবশেষে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। কাঞ্চন–নিপুণ পরিষদে থাকবেন দেশের অভিনয় অঙ্গনের জনপ্রিয় অনেক তারকা। গতকাল সন্ধ্যার পর রাজধানীর কাকরাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কার্যালয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে প্রথমবারের মতো তাঁর অবস্থান সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিল্পীরা সাহায্য নিয়ে নয়, কাজ করে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান। সুন্দর কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলে শিল্পীদের কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে এই অঙ্গনের শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, টেকনিশিয়ানসহ সবার সঙ্গে মিলে আন্তরিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিগত সময়ে দেখা গেছে, অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল শিল্পী–কলাকুশলীদের হাতে সাহায্য তুলে দেওয়ার সময় ফেসবুক লাইভ করা হতো। শিল্পী–কলাকুশলীদের সহযোগিতার নামে লাইনে দাঁড় করিয়ে ফেসবুক লাইভ করার ব্যাপারটা পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাইকে অসম্মান করা—এমনটাই মনে করেছেন শিল্পী–কলাকুশলীদের অনেকে। বিগত সময়ের এমন ঘটনা ঘটায় অনেকে বিব্রতও। গতকাল সংবাদ সম্মেলেনে এই বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সর্বশেষ কমিটির উপদেষ্টা ইলিয়াস কাঞ্চন আলাদা প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার কারণ হিসেবে বললেন, ‘আমাকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কথা যখন একজন সাংবাদিক বলেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমি হ্যাঁ বলিনি। ১৫ দিন ভেবেছি, চিন্তা করেছি—এরপর হ্যাঁ বলেছি। এবারও যখন নিপুণ, রিয়াজ, ফেরদৌস, খোরশেদ আলম, শামসুল আলমরা বারবার বলছিল—আমি বলেছি, সময় দাও। আপাতত কিছুই বলব না। ১০ দিন পর হ্যাঁ বলেছি।’ চিত্রনায়িকা নিপুণকে সঙ্গে নিয়ে প্যানেল গঠনের বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেকে বলতে পারেন, নিপুণ একজন জুনিয়ার আর্টিস্ট, তাকে নিয়ে কেন আমি প্যানেল গড়লাম? কিন্তু আমি যেমন মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি, নিপুণও সেই কাজ করে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সংকটে নীরবেই সে চলচ্চিত্রের শিল্পী–কলাকুশলীদের পাশে থেকেছে, উপকার করেছে। করেও যাচ্ছে। একজন নারী শিল্পী হয়েও যেভাবে নীরবে মাঠে নেমে তার অঙ্গনের মানুষদের নানাভাবে উপকার করেছে, সত্যিকারে নেতা তো এভাবেই কাজ করেন। মানুষের প্রতি নিপুণের ভালোবাসা আছে। সংগঠিত করার একটা ক্ষমতাও আছে। তাই আমি মনে করছি, একজন যোগ্য সেক্রেটারি নিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি।’
কথায় কথায় ইলিয়াস কাঞ্চন এ–ও বললেন, ‘একটা কথা বলতে চাই, দুস্থ শিল্পী নাম দিয়ে শিল্পীদের অপমান করা ঠিক নয়। শিল্পী হিসেবে আমাদের সম্মান যতটুকু ছিল, তা এখন ওই জায়গায় নেই। সম্মান যদি না থাকে, সেই অসম্মান কিন্তু আমার গায়েও লাগে। আজ আমার যা কিছু হয়েছে, সব এই চলচ্চিত্র থেকেই। কোনো কিছুতে চলচ্চিত্রের যদি সুনাম হয়, সেটা আমারও ভালো লাগে। একজন মাসে ২০-২৫ টাকার নিচে চলতে পারেন না। কিন্তু একজন শিল্পীকে কদিন সাহায্য দিয়ে বাঁচাবেন? সাহায্য দিয়ে শিল্পী বাঁচেন না, ইন্ডাস্ট্রিকেও বাঁচানো যায় না। ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে হলে আমাদের কিছু প্রোগ্রাম, কৌশল ও পরিকল্পনা করতে হবে। সেই পরিকল্পনা গুলো যেভাবে হওয়া উচিত ছিল, সেভাবে এত দিন হয়নি। গেল ১০ দিন আমরা সবাই এসব নিয়ে ভেবেছি। কারও কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য কেউ শিল্পী হননি। আরেকটা কথা, সাহায্য মানুষকে পঙ্গু করে দেয়। আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বেশি নির্মাণ করতে হবে। মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি যদি না বাঁচে, আমার এই সব শিল্পী সমিতি দিয়ে কী হবে। ইন্ডাস্ট্রিকে যদি বাঁচাতে হয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে করতে হবে।’
নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু আজ চলচ্চিত্র যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার মনে হচ্ছে, আমরা সংকটকাল পার করছি। আমি একা কিন্তু কিছুই করিনি, আমার পাশে বসে আছেন রিয়াজ ভাই, সাইমন, ইমন—তাঁরাই কিন্তু আমাকে আজ এখানে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। আর কাঞ্চন ভাইকে অনেক ধন্যবাদ, তিনি এই সময় এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ নিপুণ আরও বলেন, ‘আমি শুধু একটা কথাই বলব, যদি আমার প্যানেল নির্বাচিত হয়, তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এফডিসিতে আনব। তিনি ছাড়া এফডিসিকে বাঁচানো আর সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেখাব, তাঁর বাবার গড়া এফডিসি এখন কী অবস্থায় আছে। আমার মনে হয়, তিনি যদি একবার আসেন, তাহলে পুরো এফডিসির চেহারা পাল্টে যাবে।’ কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন সাইমন সাদিক। ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ইমন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নিরব এবং এই প্যানেলে থাকবেন রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, সুচরিতা, রোজিনা, নূতন, সম্রাট, জেসমিন, আফজাল শরীফ, গাঙ্গুয়াসহ অনেকেই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদুল আলম, শামসুল আলম, পরিচালক বদিউল আলম প্রমুখ। ১১ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন কাঞ্চন-নিপুণ। তারপর আনুষ্ঠানিক প্যানেল ও ইশতেহার ঘোষণা করবেন তাঁরা।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিল্পী সমিতির সাধারন সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিশা সওদাগার এবং জায়েদ খান। তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এবং প্রায় সময় বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তারা। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চাঁদার রশীদ নিয়েও বেশ বিপাকে পড়েছেন মিশা সওদাগার এবং জায়েদ খান। এমনকি এই বিষয়ে থানায় জিডিও হয়েছে। এদিকে এরই লক্ষ্যে শিল্পী সমিতিতে থাকা চলমান সকল তর্ক-বির্তক এবং আলোচনা-সমালোচনা দূর করার তাগিদে বেশ কিছু প্রতিশ্রতি দিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীরা।