বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ কিংবা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কোনো সদস্যের নাম এক সময় কেউ নিতে পারতো না ভয়ে। এমন দিন একটি সময় পার করে এসেছে। সেই সময়ে যারা আওয়ামীলীগ করতো তারা অনেকে সংগোপনেই দলটির রাজনীতি করতো। কিন্তু ইতিহাস বদলাবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকারও হয়তো একদিন তার ক্ষমতা হারাবে। তবে আ.লীগ এক সময় বড় ধরনের কঠিন পরিস্থিতি পার করে এসেছে। এবার সেই সময়ের রাজনীতি করা প্রসংগে কথা বললেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানিয়েছেন, কতটা চাপে ছিলেন আ.লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে। তিনি যেকোনো সময় জেলে যেতে পারতেন সেই সময় এমনটিই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা থাকাকালে তৎকালীন সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গিয়েছিলাম। ওই সময় আওয়ামী লীগের খুব দুর্দিন ছিল। আওয়ামী লীগের নাম শুনলেই আঁ’তকে উঠতো। আমার সঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের গভীর সম্পর্ক ছিল তলে তলে। কারণ, তখন মহামান্য এরশাদ, মহামান্য জিয়া-এই সমস্ত স্বৈরশাসকরা আওয়ামী লীগের নাম শুনতে পারতো না।
জিয়া ও এরশাদ সরকারের সময়কালের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তার সংযোগ থাকে তাহলে তার জীবন শেষ করার জন্য ফন্দি ফিকির আটতো।
রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনের ২য় তলার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার রাতে অষ্টগ্রাম ইটনা মিঠামইন উপজেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে রাষ্ট্রপতির ৭৯তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী তার কিশোরগঞ্জের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭৮ সালে আমি এসডিও হয়ে কিশোরগঞ্জে গেলাম। সেখানে আমি ৪-৫ মাস ছিলাম। ওই সময় আমার সঙ্গে হামিদ সাহেবের (বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা) পরিচয় হলো। মনে একটা অতৃপ্তি ছিল-আসলাম আর গেলাম দেখলাম না কিছুই। পরে যখন কিশোরগঞ্জকে জেলা করা হয় তখন আমি সেখানে প্রথম ডিসি করা হয়। আমার তখন হামিদ সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
ময়মনসিংহের প্রিন্সিপ্যাল মতিউর রহমান সাহেবের সঙ্গে আমার খুব পরিচয় হয়ে ওঠে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে খুব পরিচিত ছিলেন। সেই অবস্থায় প্রিন্সিপ্যাল মতিউর রহমান সাহেব আমাকে স্নেহ করতেন। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। মতিউর রহমান সাহেব তখন আওয়ামী লীগের হামিদ সাহেবকে বলে দিলেন-মান্নান সাহেব যাচ্ছেন ডিসি হয়ে, এই মান্নান সাহেবের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। এই কথা বলার পর হামিদ সাহেব আমার বাসায় আসতেন। তখন থেকে তার সঙ্গে আমার কত আলোচনা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভৈরবের সঙ্গে সংযোগের প্রথম সেতু আমরাই করেছিলাম। করিমগঞ্জের সঙ্গে ইটনা-মিঠামইনের সংযোগস্থল চামটাঘাটে আমি অনেকবার গিয়েছি। ওখানে প্রথম দালান নির্মাণ করি আমি। ওখানে সড়ক নির্মাণ করে কাঁটাওয়ালা গাছ লাগালাম। এসব কাজ এখনও আমার মনে আছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরও বলেন, কিছুদিন আগেও হাওর ছিল একটি অবহেলার নাম। আমি তো চাকরি করেছি সারা জীবন। কোনো অফিসার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, খালিয়াজুড়ি, জামালগঞ্জ, শাল্লায়-এসব জায়গায় যেতে চাইতো না। জোর করে পাঠানো হতো। অভিশাপ। আমি যখন বলতাম আমার বাড়ি হাওর এলাকায় (তখন আমার দিকে) দুবার করে তাকাতো। (তাদের মনে প্রশ্ন ছিল) এ কীভাবে আসলো এখানে।
উল্লেখ্য, দেশে সেই সময়ে আ.লীগের অনেক নেতাকর্মী সক্রিয় থাকলেও সামনে এসে কোনো কিছু করতে পারেনি। সে সময়টার কথা অনেক আ.লীগ নেতা বর্তমান সময়ে এসেও স্মৃতিচারন করে থাকেন। সেই সময়কার নিবেদিতপ্রাণ অনেক আ.লীগ নেতা দু:সহ পরিস্থিতিতে কীভাবে সময় পার করেছিলেন সেটা আজীবন মনে রাখবেন বলেই মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। আ.লীগ নেতারা মনে করেন, দলকে সেই সময় নিশ্চিন্হ করে দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনরা চেষ্টা করেছিল।