ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের অন্যতম দাপটে অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে পারিবারিক ভাবে নাম তার রাখ হয় ‘ইদ্রিস আলী’। ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় প্রথমবারের মতো পা রাখেন তিনি। পরবর্তীতে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমা দিয়ে সবার নজর কাড়েন ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে এদিকে এবার আলোচ্য বিষয় আগামী ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন গুণী এই অভিনেতা। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লড়বেন অভিনেত্রী নিপুণ। তাদের সঙ্গে অপর প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান কমিটির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর ও সেক্রেটারি জায়েদ খান।
আজ সন্ধ্যায় কাকরাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজ প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেবেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সেখানে তিনি জানাবেন এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিস্তারিত। তার আগে এই নির্বাচন নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। জানিয়েছেন কেন তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন? নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলেই বা কী করবেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘নিপুণরা আমার কাছে এসে যে জিনিসটা বলল সেটি হলো, দীর্ঘদিন ধরে যারা এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নেতৃত্বের মধ্যে অন্যান্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটা রেশারেশি হচ্ছে। মনোমালিন্য হচ্ছে। এই মনোমালিন্য যদি চলচ্চিত্রে থাকে তাহলে তো উন্নয়ন হবে না। এই বিষয়টা আমাকে ভাবিয়েছে।’
চলচ্চিত্রের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার কোটি টাকা হল মালিকদের বরাদ্দ দিয়েছেন, তাদের হলগুলো সংস্কার করার জন্য। তাদের একজনও কিন্তু টাকা নেয়নি। তাদের কথা হলো, টাকাটা নিলে মাসে মাসে সুদ দিতে হবে। কিন্তু আমি যদি ছবি চালাতে পারি এই টাকা নিয়ে মাসে মাসে সুদ গুণব কেন? আমার তো নিশ্চয়তা থাকতে হবে।’
নিজে জয়ী হতে পারলে এ বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস ইলিয়াস কাঞ্চনের কণ্ঠে, ‘আমরা যদি ছবির সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাহলে এই ১ হাজার কোটি টাকা হল মালিকরা নেবে, সিনেমা হলেরও সংস্কার হবে। আমরা বিজয়ী হতে পারলে সেই চেষ্টাটাই করব।’
সঙ্গে তিনি এও যোগ করেন, ‘আমি যতদূর জানি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একটা দুর্বলতার জায়গা এফসিডি। যেহেতু তার বাবার হাতে এটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি যে টাকাটা দেবেন, কার কাছে দেবেন? কে এটা হ্যান্ডেল করবেন? এমন একটা ব্যক্তি তো লাগবে। এই কথাগুলো আমাকে (নিপুণরা) বুঝিয়েছে। তখন আমার মনে হয়েছে যে প্রস্তাবনাটা আসলেই ভালো।’
শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়াতে ছেলের (মীরাজুল মঈন জয়) কাছ থেকেও উৎসাহ পেয়েছেন বলে জানান ‘বেদের মেয়ে জ্যোছ্না’র নায়ক। জানালেন সেই কথাও, “তারা (নিপুণরা) আমার ছেলেকেও ধরেছে। ছেলে আমাকে বলল, ‘বাবা শিল্পী সমিতি থেকে তোমার তো কিছু নেওয়ার নেই। তুমি যে পর্যায়ে গেছো সেখান থেকে এই সংগঠনের সভাপতি হওয়া তোমার জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুও না। কিন্তু তুমি তো ওখান থেকেই এসেছো। তুমি দেশের জন্য এতকিছু করছো, কিন্তু তুমি যে জাগয়া থেকে এসেছো সেই জায়গার মানুষগুলোকেও যদি একটা কিছু করে দিতে পারো, ওই মানুষগুলো তো তোমাকে স্মরণ করবে। এই চিন্তাটা মাথায় নিয়েই আমি এগিয়েছি। দেখি সব রেশারেশি বাদ দিয়ে, সকলকে সাথে নিয়ে কী করতে পারি।”
ইলিয়াস কাঞ্জন বলেন, ‘প্রযোজক, পরিচালক কারো সঙ্গে কারো মিলমিশ নাই। আমি সংগঠনে না থাকলেও মাঝখানে করোনার সময় জায়েদের (জায়েদ খান) ঘটনা কিন্তু মেটানোর চেষ্টা করেছি। ওটাই আমি চাচ্ছি সবাইকে নিয়ে এগুতে।’
নন্দিত এই অভিনেতার ভাষ্য, ‘সবাই যদি থাকে, সবাই যদি হাত বাড়ায়, তাহলে এর উন্নতি হবে। না হলে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেও তো সকলকে নিয়ে যেতে হবে। একা গেলে হবে না। কারণ আপনি গেলেন, শিল্পী সমিতি গেলো, আর কেউ গেলো না, বাকিরা তো তখন বাধা দেবে। তাই আমি সকলকে নিয়েই চেষ্টা করব।’
চলচ্চিত্রের আরও অনেক তারকাও তাদের প্যানেলে আছেন বলে জানিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ‘পারভেজ ভাই অসুস্থ, ফারুক ভাই অসুস্থ। বাকি সিনিয়রা তো মরেই গেছেন। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। আলমগীর ভাই আছেন আমার সঙ্গে। আমি রোজিনা ম্যাডাম, চম্পা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শবনম ভাবীও বিষয়টা শুনে খুব খুশি হয়েছেন। আর ফেরদৌস, রিয়াজ, সাইমন, ইমন তো আমাদের সঙ্গে আছেই।’
সবশেষ তিনি যোগ করেন, ‘আমার এখান থেকে কিছু নেওয়ার নাই। আমার নিজস্ব কোনো স্বার্থ নেই। আমি তো এখানকারই মানুষ। এখকার কিছু উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারলে ভালো লাগবে।’
দিন যতই যাচ্ছে, ততই যেন ক্ষতিগ্রস্থের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে, একটা সময়ে ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ’ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ আবারও আগের জায়গায় নিতে সবার সহযোগীতা চান ইলিয়াস কাঞ্চন।