জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস লেখেন। সেখানে তিনি সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে এ ঘটনায় দ্বীন ইসলাম ও আম্মানকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, জবিতে ভর্তি হওয়ার পরপরই অবন্তিকাকে টার্গেট করে সহপাঠী আম্মান ও তার চক্রের ১০-১২ জন। আম্মান সহ ৮-১০ জন সবসময় ওর পিছণে লেগে থাকত, অবন্তিকা প্রায়ই তার সে কথা বলত। এই চক্রে রয়েছে রাগীব হাসান রাফি, রেজাউল, লাকী আক্তার, বন্যা, আঁখি, রিমি, সামিরা, গীতা মন্ডল, মাহিম ও সুমাইয়া।
অবন্তিকার মা জানান, তারা তার মেয়েকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। এর প্রধান কারণ ক্লাসে প্রথম হওয়া। তারপর মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন, সহ্য কর, সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, অবন্তিকা ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই এয়ারফোর্সে চাকরি পেয়েছিলেন। এক বছর পর চাকরিতে ফিরলে তাদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
তাহমিনা শবনম জানান, আম্মানের সহযোগীরা হোস্টেলে অবন্তিকাকে নির্যাতন করত। তারা তাকে পড়তে দিত না, পরীক্ষার আগে বই সরিয়ে নিতো, রমে ডিজে পার্টি করত।কাপড়ও ডাস্টবিনে ফেলে দিতো। পরে তার মামা তাকে হোস্টেল থেকে বাসায় নিয়ে যায়।
অবন্তিকার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রসঙ্গে তাহমিনা শবনম বলেন, আম্মানের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় অবন্তিকাকে ফাঁসানোর জন্য তারা একটি জিডি করেছে। এটি আম্মান চক্র দ্বারা সাজানো একটি নাটক ছিল। তিনি জানান, ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট তিনি তার বাবার সঙ্গে সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বসেন। কিন্তু আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। অবন্তিকা কথা বলার সময় তার শিক্ষাবর্ষ ৬ মাস পিছিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। জোর করে তার বাবার কাছে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল।
মেয়ের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী জানতে চাইলে তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার মেয়েকে মরতে হতো না। তাই আইন বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর কেউই এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমার মেয়ে বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আর মৃত্যুর আগে কেউ কারো নামে মিথ্যা লেখে না। শুধু আম্মান ও দ্বীন ইসলাম নয়, আরও ৮-১০ জন অবন্তিকাকে উত্যক্ত করত। তারা আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। তারা কি দায় এড়াতে পারে?
মৃত্যুর আগে অবন্তিকার শেষ ঘটনা কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইফতারের আগে তাকে মন খারাপ দেখে কী হয়েছিল জানতে চাই? উত্তরে বলে- মা, ওরা মনে করে আমাকে বাঁচতে দেবে না। সব সময় পেছনে লেগে থাকে। বাসায় এসেও শান্তি পাই না। আম্মান নাকি প্রতিশোধ নেবে। আমি মরে না যাওয়া পর্যন্ত ওরা শান্তি পাবে না।’
মেয়ে হ/ত্যার বিচার পাওয়ার বিষয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। ভাইস চ্যান্সেলরও আন্তরিক। অবন্তিকাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জেনেছি। আশঙ্কা, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বা সাক্ষী না পেলে বিচার থেমে যায়!
তিনি বলেন, আমার মেয়ে আর ফিরবে না। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো মেয়েকে যেন এমন হয়রানির শিকার হতে না হয়। অনেকের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। তাই অবন্তিকার মামলার বিচার হলে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটাই দাবি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাত অবন্তিকা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। বর্তমানে দুই আসামি কারাগারে রয়েছে।