গ্রামীন টেলিকম শ্রমীক ও কর্মচারীদের শ্রমিক আইন না মেনেই জোর করে ছাটাই করা হয়। হঠাৎ করে কোন নুটিশ ছাড়াই এমন সিদ্ধান্তের কারনে বিপদে পড়ে যায় ওই কর্মচারীরা। পরে বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতের দারস্থ হয়। এবার সে বিষয়ে নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করল পুলিশ।
গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান (৩৮) ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে (৪২) গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বিকেলে তাদের গ্রেফতারের পর বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতার অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ও ৯ কোটি টাকা চলে যায়।এককভাবে আইনজীবীদের কাছে চলে যায় ১৬ কোটি টাকা। এরাই মূলত যোগসাজশ করে ইউনিয়নের অন্য নেতাদের এবং শ্রমিকদের বুঝিয়েছেন যে, ‘তোমরা যদি এখানে স্বাক্ষর না কর, তাহলে দেখা যাবে একসময় তোমরা সেই টাকাটাই পাবে না।’
হারুন অর রশীদ বলেন, মামলা প্রত্যাহার করতে আইনজীবী ইউসুফ আলী ও শ্রমিক ইউনিয়নের কতিপয় নেতা গুজব ছড়ান ‘বাংলাদেশ হবে শ্রীলঙ্কা। আর দেশের রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. ইউনূস।’
তিনি বলেন, ‘ওরা গুজব ছড়িয়েছে যে বাংলাদেশ কয়েকদিনের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে। এছাড়াও. ইউনূস দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাহলে তারা দেশে থাকতে পারবে না। তাই আমরা যে টাকা এনেছি তা দিয়ে আপনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করুন। ‘এটি একটি অসম চুক্তি। তারা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষর করে যে চুক্তি করেছেন, আমি মনে করি এটি একটি অসম চুক্তি। এর মাধ্যমে তারা গোপনে যেভাবে টাকা নিয়েছেন। তারা এ টাকা নিতে পারেন না। এর ফলে তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “এ ছাড়া, ভয়ভীতি ও প্রলোভনের মুখে ইউনিয়নের নেতারা আস্থার অপব্যবহার এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ষড়যন্ত্র করেছে।” এখানে তিনজন জড়িত ছিল। তাদের একজন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি। সে এমডি আগে যে এমডি ছিল সে এখন ভাইস চেয়ারম্যান। তার যোগসাজশে কিন্তু তারা টাকাগুলো আঁতাত করে নেতা ও আইনজীবীদের মধ্যে বিতরণ করেন।’
হারুন অর রশিদ জানান, এ প্রেক্ষিতে শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক নেতা বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলাটি ডিবিতে আসে। তদন্ত সাপেক্ষে দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও কারা কারা জড়িত আছেন, রিমান্ডে তা বের হয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ ঘটনায় আরও কার কার দায় রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
বকেয়া পরিশোধ না করার জন্য গ্রামীণ টেলিকমের ১৪ জন প্রাক্তন কর্মচারী ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেছিলেন। পরে গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীরা বেতন চেয়ে ৯৩টি মামলা করেন। ঢাকা শ্রম আদালতসহ মোট ১৯০টি মামলা হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের অবসান চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। চাকরিচ্যুত ১৫৭ কর্মচারীর পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানান কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী
তবে দাবিদাররা হঠাৎ করে মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
পরে ওই ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে মিরপুর থানায় আত্মসাতের মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ওই ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কর্মচারীদের মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক আটক করেছে বলে জানানো হয়।