জাতি হিসেবে ব্রিটিশদের আছে কাল্পনিক জেমস বন্ড, আমাদের আছে রক্তমাংসের কিংবদন্তি গায়ক জেমস। তার পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। ভক্তদের কাছে ‘গুরু’ নামে পরিচিত। আজ সোমবার (২ অক্টোবর) ৫৮ বছর পূর্ণ করে ৫৯ বছর বয়সী হতে যাচ্ছেন দেশের কিংবদন্তি এই রক তারকা।
দেশের রক কিংবদন্তি জেমস কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ভালো আছি।’ আজ এই জনপ্রিয় গায়কের জন্মদিন। প্রতি বছর, দিনটি শুরু হয় জেমস ভক্তদের শুভেচ্ছা, ভালবাসা এবং উপহার গ্রহণের মাধ্যমে। বরাবরের মতো এবারও নিজের জন্মদিনে কোনো আয়োজন করছেন না জেমস। তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও জন্মদিনের কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি না। তা সত্ত্বেও দিনটি কাটে সবার ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায়।
জেমসের জন্ম ২ অক্টোবর ১৯৬৪ সালে নওগাঁয়। বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। জেমসের জীবনে অনেক টুইস্ট এবং টার্ন আছে, অনেক গল্প আছে। তার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেমস তার পরিবারের খরচে সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন। বাবা সাথে গান নিয়ে অভিমান করে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। গানের নেশায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। চট্টগ্রামে আজিজ বোর্ডিং নামে একটি বোর্ডিং-এ থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকেই তার সঙ্গীত জীবন শুরু হয়।
১৯৮০ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ নামে একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জেমস নিজেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট ছিলেন। তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। তবে অ্যালবামটি জনপ্রিয়তা পায়নি কারণ এটি তখনকার শ্রোতাদের শ্রবণ রুচির সাথে কিছুটা বাইরে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামে অ্যালবাম প্রকাশ করে সুপারহিট হন জেমস।
এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো বের হয় ফিলিংস ব্যান্ড থেকে।
এ ছাড়া জেমসের অন্যান্য অ্যালবামগুলো হলো নগর বাউলের ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘বিজলি’। একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুখিনি দুঃখ করোনা’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’,আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’, ‘কাল যমুনা’’।
জেমস চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেও সাফল্য পেয়েছেন। চলচ্চিত্রে তার বেশ কিছু গান সুপারহিট হয়েছে। ‘দেশ দ্য লিডার’, ‘সত্তা’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি।
বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গানেও কণ্ঠ দিয়ে জয় করেছেন কোটি ভক্ত-শ্রোতার মন। বলিউডে তার ‘ভিগি ভিগি’ (গ্যাংস্টার), ‘চল চলে’ (ও লামহে) এবং ‘আলবিদা’, ‘রিস্তে’ (লাইফ ইন এ মেটো), ‘বেবাসি’ (ওয়ার্নিং) উল্লেখযোগ্য।
একটি প্রজন্মের কাছে, জেমস এখনও একটি উন্মাদনা, তার প্রতি তার ভক্তদের ভালবাসা এতটাই শক্তিশালী যে তিনি তার ভক্তদের ‘দুষ্টু ছেলের দল’ হিসাবে উল্লেখ করেন।