রুটিরুজি জন্য অনেক মানুষ দেশ ছেড়ে প্রবাসে জীবনযাপন করে । পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও একটি ভালো আয়ের এর উৎস খুঁজতে পাড়ি জমায় বিদেশে। প্রবাসে যাওয়া অনেক নারী বিভিন্ন ভাবে নি/ র্যাতনের শিকার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। গণমাধ্যমেও এ বিষয় নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে প্রবাসী অনেক ভুক্তভোগী নারীর কথাঅ এবার এমন একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন সৌদি প্রবাসী এক তরুণী ।
সৌদি আরবে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নি/ র্যাতিত হচ্ছেন হবিগঞ্জের এক তরুণী। তাই তিনি ভিডিও কলে তার পরিবারের সদস্যদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
এরই মধ্যে দেশে ফেরার জন্য তরুণীর কান্না সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। নি/ র্যাতিতা তরুণ শিল্পী আক্তার জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহমেদাবাদ ইউনিয়নের তাইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই তরুণীকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাকে বলতে দেখা যায়, আমি তুমার কাছে ভিক্ষা চাই। আমাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাও। তিন বছর আমাকে আটকে রেখেছে। সে আমাকে ধরে মারধর করে। মালিককে মারুন, মালিকের পুল-পুয়ারকে মারুন। সে আমাকে খাবার দেয় না, একবার দিলে আবার দেয় না। মীরা তারকে রুমের ভিতর তালাবদ্ধ করে রাখে। আপনি যদি আমাকে দেশে না নিয়ে যান, আমি আমার মীরালাইবের লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেব।
শিল্পীর মা নুরচান বিবি জানান, তার মেয়ে শিল্পী আক্তার ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব যান। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাড়িতে কাজের মেয়ের চাকরি নেন। তবে বাড়িটি সৌদি আরবের কোন এলাকায় তা তিনি নিশ্চিত নন। সেখানে যাওয়ার পর তাকে নি/ র্যাতন করা হয়। কাজে সামান্য ভুল হলেই মারধর করা হয় শিল্পীকে। বাড়ির মালিক, ছেলে-মেয়েদের দ্বারা তিনি প্রতিনিয়ত নি/ র্যাতন চালাতেন।
প্রথমে বাবা-মা ও দরিদ্র পরিবারের কথা ভেবে নীরবে সব অত্যাচার সহ্য করেন শিল্পী। সেখানে দুই বছর থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পার হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। অন্যদিকে ভিসার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বলতে গিয়ে শিল্পীর ওপর নি/ র্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানসিক নি/ র্যাতনে বর্তমানে অসুস্থ এই শিল্পী। অভিভাবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
নূরচান বিবি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকজনও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করছি।
শিল্পীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, পরিবারে অভাবের কারণে মেয়েকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি। এখন আমার মেয়ে অনেক কষ্টে আছে। আমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই।
তিনি বলেন, ঢাকার পুরানপল্টন এলাকার ‘ফোর সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’-এর মাধ্যমে সৌদি আরবে গেছেন শিল্পী।
সংগঠনটির পরিচালক খালেদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- ‘আমরা মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এক মাস আগে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। আশা করি শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ দিলে দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।
ভুক্তভোগির পিতা-মাতা গণমাধ্যমে তাদের কষ্টের কথা প্রকাশ করেন। এরপরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেক মানুষের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে ভুক্তভোগীর পরিবারের এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করেননি, কি কারণে তা জানা যায়নি। তবে ওই এলাকার দায়িত্বরত পুলিশ জানিয়েছে যদি লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব এবং যোগাযোগের মাধ্যমে তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।