বাংলাদেশ সরকারের তারা তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার মসনদে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আর সেই থেকেই তিনি দেশ শাসন করছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি নিয়ে যে কথা বলে, আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি- কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দেন, আমি ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, শুধু মুখে মুখে (দুর্নীতির কথা) বলা সম্ভব হবে না। এখন আমাকে এমন লোকদের কাছ থেকে শুনতে হবে যারা নিজেরাই দুর্নীতি করে। তাদের শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে দরিদ্র মানুষের ওপর এমন চাপ থাকে যে, সুদ পরিশোধের জন্য প্রায়ই তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হয় বা আত্মহনন করতে হয়।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ১২টার পর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে। করোনার পর বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা ভাবতে হবে। নিজেদের উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। মন্দার কারণে সরকার অনেক হিসাব-নিকাশ করছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘গরিবদের টাকা দিয়ে তারা দেশে নিজেদের সুনাম তৈরি করে। কিন্তু ভাল আছে এবং ওনেক টাকা আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করেছেন। টাকা এল কোথা থেকে? এগুলো গরীব মানুষের রক্ত চোষার টাকা। এটি একটি বাস্তব জিনিস।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যা চেয়েছিলেন, আমরা একে একে করে যাচ্ছি। তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরও কিছু মানুষ আছে, কিছুতেই ভালো লাগে না।’
দেশে বেকারত্বের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। ফলশ্রুতিতে আমরা আজ দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি, বাড়াতে পেরেছি। প্রচুর কর্মসংস্থান।এখন ইচ্ছামতো যে কেউ বেকার হতে পারে।কিন্তু আসলে বেকার থাকার কোন সুযোগ নেই।কারণ আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছি।অনেক ছেলেমেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা রোজগার করছে কিন্তু এখন গ্রামে বসে।এভাবে অনেক সুযোগ আমরা করেছি।
আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে দলের সভাপতি বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি- প্রতিটি বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারের আগে পরিকল্পনা করি। আমরা যখন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করি, তখন আমাদের ইশতেহার ও নির্বাচনী ইশতেহারকে মাথায় রেখে তা করি। অন্য কথায়, আমরা জাতিকে যে প্রতিশ্রুতি দিই তা রক্ষা করি, আওয়ামী লীগ যা বলে, জনগণের জন্য যা প্রতিশ্রুতি দেয়, আওয়ামী লীগ সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হয়েছে তা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। সব ধরনের কথাবার্তা। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। অনেকে এটা স্বীকার করতে চায় না, তারা এটা করতে চায় না।
১৪ বছর ধরে সরকারে থাকায় ক্রমাগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে দাবি করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ” আমাদের দেশেও যাদেরকে নির্দিষ্ট বেতনে জীবন যাপন করতে হয় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা সেটা বুঝি। এজন্য বিদেশ থেকে খাবার কিনতে অনেক টাকা খরচ করি। আমি ভর্তুকি মূল্যে দিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরে সবাইকে তার সরকারের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেন সবাইকে। আর সেই সাথে সামনের নির্বাচনে আবারো আওয়ামীলীগকে জয়ী করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।