ভারত-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্র। এবং দেশ গুলো দক্ষিন এশিয়ার অর্ন্তভূক্ত। এছাড়াও দক্ষিন এশিয়ায় আরও অনেক দেশ রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশকেই পিছনে গেলে ক্রমশই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদন উঠে এলো প্রকাশ্যে।
গত ৩০ বছরে ভারত-পাকিস্তানের থেকে নানা খাতে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। উৎপাদন খাতের অগ্রগতি, নারী ক্ষমতায়ন ও নগরায়নসহ নানা খাতে প্রতিবেশীদের পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।ভারতের তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরালা যেভাবে এগিয়ে গেছে, উত্তর প্রদেশ ও বিহার সেভাবে এগিয়ে যায়নি। এটা যেন ভারতের মধ্যে অন্য ভারত। একইভাবে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে যে উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে পিছিয়েছে বেলুচিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশে এমন বৈষম্য নেই। বুধবার (১ ডিসেম্বর) নগরীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলন ২০২১-এ এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ ইন কমপারেটিভ পার্সপেক্টিভ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলা বাংলাদেশ ভারতের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে বাড়তো অথচ এখন এটা ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ৩ দশমিক ২৬ হারে বাড়তো এখন কমে ১ দশমিক ১৪ হার হয়েছে।
একইভাবে নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এটা এখন আরও কমে ০ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। মাথাপিছু আয়ে ৯০ দশকে পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। অথচ এখন পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু আয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে। উৎপাদন খাতে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নব্বইয়ের দশকে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এখন হয়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ উৎপাদন খাতে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। একই সময়ে ভারতে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে উৎপাদন খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। ৯০ দশকে এ খাতে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। নগরায়নেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের নগরায়ন হার ছিল ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। এখন বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ভারতে একই সময়ে নগরায়নের হার ছিল ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এখন দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাকিস্তানের নগরায়নে সেভাবে অগ্রগতি নেই। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে নগরায়ন হার ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এখন হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশে নগরায়ন বেড়ে চলেছে ভারত পাকিস্তানের তুলনায়। ভারত-পাকিস্তানকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলার অন্যতম কারণ কর্মসংস্থানে নারীর উপস্থিতি বেড়েছে। ৯০ দশকে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে নারী উপস্থিতির হার ছিল ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে নারীর উপস্থিতি ছিল ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন হয়েছে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশে।
উৎপাদন খাতেও ভারত পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
বিনায়েক সেন বলেন, নানা সূচকে ভারত-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। নগরায়ন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এসব দেশে যেভাবে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে, বাংলাদেশে নেই। তবে বাংলাদেশের সমতলে যেভাবে এগিয়ে গেছে উপকূল ও পাহাড়ি এলাকা সেভাবে এগিয়ে যায়নি। তবে সরকার এসব এলাকা উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশের সামাজিক সূচক অনেক ভালো। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি হাওরের ছেলে। গ্রামীণ উন্নয়নে আমি কাজ করছি। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, কমিনিউনিটি ক্লাব, হাওর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পে আমি বেশি নজর দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। এসব কারণে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ্যে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ইতিমধ্যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফলতা পেয়েছে। এবং চূড়ান্ত ভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। স্নল্প সময়ে ববাংলাদেশের এমন উন্নয়নের অগ্রগতি দেখে বিশ্বের অনকে দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।