রাজধানী ঢাকায় অনেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং জিম্মি করে রাখে সাধারণ মানুষ বা ব্যবসায়ীদেরকে। তবে এই ধরনের অসদুপায় অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না এই সকল প্রতারকেরা। এবার অভিনব উপায়ে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করার মাধ্যমে একটি চক্র গাড়ির মালিক এবং চালকদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করে প্রতারণা করছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হলো না এই চক্রের সদস্যদের।
যাত্রী হয়ে বাসে চড়ে অভিনব উপায়ে ব্লু-বুক, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করতো এই চক্র। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকের নম্বর সংগ্রহ করে ফোনে ১০ হাজার টাকা দাবি করত। টাকা না দিলে চালকদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হতো। এমনকি তারা কাগজপত্র আটকে রেখে বাস মালিকদের কাছ থেকে মাসিক ফি আদায় করে।
শনিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), মোঃ শুকুর আলী (২৮), মোঃ হৃদয় হোসেন (২১) ও মোঃ শামীম (২৫)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিতে ব্যবহৃত সিমসহ দুটি মোবাইল সেট, বিভিন্ন বাসের চুরি হওয়া নিবন্ধন সনদ, ফিটনেস সনদের মূল কপি ও ট্যাক্স টোকেন জব্দ করা হয়।
রোববার (১৭ জুলাই) মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজধানীতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন, রবরব পরিবহন এবং অন্যান্য পরিবহনের বাসের যাত্রীবেসে অভিনব পদ্ধতিতে ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে। পরে তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকের নম্বর সংগ্রহ করে প্রতিটি চুরি যাওয়া গাড়ির কাগজপত্রের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করে।
বাস মালিকরা প্রথমে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চক্রের সদস্যরা গাড়িতে আগুন দিয়ে চালকদের প্রাননাশের হুমকি দেয়। কাগজপত্রবিহীন অবস্থায় রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাস মালিকরা চক্রের দেওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে চুরি করা প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫/৭ হাজার টাকা তাদের দেওয়া বিভিন্ন বিকাশের মাধ্যমে দিতে হতো। দলটি টাকা পেয়ে গাড়ির কিছু কাগজপত্র ফেরত দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, জব্দকৃত গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদের মাসিক ফি দিতে বাধ্য করা হয়।
অন্য মালিকরা মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় সার্কেলের মাস্টার নিজেকে তুফান পরিচয় দিয়ে মালিকদের হুমকি দেন- ‘আমি তুফান, ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহন মালিক আমাকে মাসিক চাঁদা দেয়, যদি কোনো পরিবহন মালিক, মাসিক চাঁদা না দেয়, ওই সব গাড়ির কাগজপত্র চুরি করবো, ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রাখে না।’
তাদের অত্যা”চা/রে বিরক্ত হয়ে গাড়ি মালিকরা বিষয়টি রাজধানীর বিভিন্ন থানায় জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু কোনো ফল না হওয়ায় বাস মালিকরা বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে জানান। এরপর সিআইডি, ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে মূল হোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে ডেভেলপমেন্ট এজেন্টদের মাধ্যমে ফোন করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।
সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে ইমাম হোসেন যিনি সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত, তিনি বলেন, গাড়ির কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়ার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিয়ে থাকেন না চালকেরা বা মালিকেরা। যার কারণে তারা এ বিষয়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেন না কিন্তু যখন তারা তাদের কাছে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দাবি করে, তখন তারা গোয়েন্দা পুলিশের শর’নাপন্ন হন।