গত কিছু দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গনমাধ্যম গুলোতে একটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছে আর সেটি হল পুলিশ হেফাজতে সুমন নামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা, এদিকে সুমন শেখ ওরফে রুমনের (২৫) মরদেহ মৃত্যুর ৪৪ ঘণ্টা পর বুঝে নেন তার বাবা পেয়ার আলী। তবে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বজনদের কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন সুমনের স্ত্রী।
স্বজনদের অভিযোগ, থানা হেফাজতে যেকোনো মৃত্যুর দায় থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। দায় এড়াতেই নানা টালবাহানা করে গোপনে সুমনের মরদেহ তার বাবা পেয়ার আলীর কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সুমনের মরদেহ দাফনও করা হয়েছে।
সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সুমনের মরদেহ নিতে পুলিশ আমাদের শর্ত দিয়েছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে রহস্য আছে। সে কারণে আমরা আদালতে মামলা করতে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে সুমনের বাবাকে পুলিশ হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত মরদেহ নিতে বাধ্য করেছে। পুলিশ নিজেদের গাফিলতি ও দায় এড়াতে যা করা দরকার তাই করেছে।
জান্নাত আক্তার আরও বলেন, আমরা চেয়েছিলাম আইন অনুযায়ী লাশ গ্রহণ করতে। কিন্তু পুলিশ আমাদের না জানিয়ে সুমনের লাশ জোর করে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেছে।
সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তারের ভাই মোশারফ সাইফুল বলেন, আমি জান্নাতকে নিয়ে মামলা করতে আদালতে গিয়েছিলাম। আমরা যখন মামলার কাজে ব্যস্ত ঠিক সেই সুযোগে পুলিশ আমাদের না জানিয়ে সুমনের বাবা ও ভাইকে ডেকে নিয়ে জোর করে লাশ হস্তান্তর করেছে। সুমনের বাবাও আমাদের জানিয়েছেন যে, লাশ নিয়ে যাওযার জন্য পুলিশ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমরা আজিমপুর কবরস্থানে যাই। কিন্তু সেখানে তারা আমাদের কথা শোনেনি। আমাদের না জানিয়ে মরদেহ হস্তান্তরের বিরোধিতা করলে পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়। আমাদের না জানিয়েই রামপুরায় সুমনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আবার আজিমপুর কবরস্থানে সুমনের দাফনও করা হয়।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, মরদেহ বুঝে নেওয়ার জন্য সুমনের স্ত্রীর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই তারা সাড়া দেননি। সুমনের বাবা পেয়ার আলী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ছেলের লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যান।
সুমনের নাম নিয়ে জটিলতা
ময়নাদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ নিহত যুবকের নাম সুমন শেখ বলে উল্লেখ করেছে। অফিসেও তার নাম সুমন শেখ বলে জানা গেছে। তবে নিহতের স্ত্রী জানান, তার নাম রুমন শেখ। তার বড় ভাইয়ের নাম সুমন শেখ। নাম নিয়ে জটিলতায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের বিভ্রাট তৈরি হয়।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, থানা হাজতে ফাঁস দিয়ে মারা যাওয়ার ব্যক্তির নাম সুমন শেখ। তার স্ত্রী জান্নাত আক্তারের দাবি তার নাম রুমন শেখ। নিহত ব্যক্তির ভায়রা ভাই সোহেল আহমেদও জানিয়েছেন তার নাম রুমন শেখ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুমনের বাবা পেয়ার আলী পেশায় একজন রিকশাচালক। স্ত্রীর (সুমনের মা) মৃত্যুর পর তিনি পশ্চিম রামপুরার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ঢাকার মুন্সিগঞ্জে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সুমন মেজ।
অন্যদিকে গত ৫ বছর ধরে সুমন শেখ ওরফে রুমন রামপুরায় ইউনিলিভারের পানিবিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন অফিসে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সুমন তার স্ত্রী ও আট বছরের ছেলেকে নিয়ে পূর্ব রামপুরায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
সম্প্রতি সুমনের অফিসে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরির ঘটনায় সুমনের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। তাকে গত ১৯ আগস্ট বিকেলে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা হাজতে নেওয়া হয়।
এরপর সুমনের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে চুরির ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ আগস্ট দিনগত রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনের ট্রাউজার দিয়ে হাজতের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করে পুলিশ। এ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার আংশিক ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, এর আগেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অনেক ঘটনা দেশে ঘটেছে এবং আবারো এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল এবং না ফেরার দেশে চলে গেল সুমন নামের এক ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা আসতেই মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যপকভাবে