বাংলাদেশ থেকে অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিকেরা রয়েছেন দেশের বাইরে। আর তারা দেশের বাইরে থেকেই দেশের অনেক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকেন। সম্প্রতি এমনই একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা একটি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনি তুলে ধরা হলো হুবহু:-
মিস্টেকেন আইডেন্টিটি বাই ডিজিএফআই!
https://youtu.be/QBMeTDu03fc আমি আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের (এএসইউ)অধিনায়ক থাকা কালীন ডিজিএফআই এর সাথে ক্লোজলি কাজ করেছি তাই তাদের এমন এলিমেন্টারি লেভেলের ভুলের সাথে আমি পরিচিত। সেই সময়কালে এএসইউতে পোস্টিং হত শুধু ইন্টেলিজেন্স প্রশিক্ষন(বিআই কোর্স) প্রাপ্ত অফিসাররা আর ডিজিএফআইতে বরাবরই যাদের সংশ্লিষ্ট সরকারের সময় বিএনপি/বিএএল পরিচিতি আছে তাদের; আর তাদের মধ্যে কেউ বিআই কোয়ালিফাইড হলেতো সোনায় সোহাগা।
ডিজিএফআইতে এই দলীয় পরিচয়ে পোস্টিং এর কারনে প্রায়সই বিরম্বনার সৃস্টি হতে দেখেছি। সবচেয়ে বেশী বিরম্বনা দেখেছি তৎকালীন মেজর(বর্তমানে কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত) মকসুরুল স্যারের হাতে। তিনি একবার একটি তদন্তে ৩ জন লোক তুলে নিয়ে এসে তাদের বেধরক পিটিয়ে নিজের ইচ্ছামত বয়ান নিলেন। তার পর আমাকে ফোন করে বললেন মোস্তফিজ কেইসতো ব্রেক করে ফেলছি, আস দেখে যাও। আমি গেলাম গিয়ে মানুষগুলোর পরিচয় আর বক্তব্য দেখে কিছুক্ষনের মধ্যেই নিশ্চিত হলাম মিস্টেকেন আইডেন্টিটি। স্যারকে বললাম “স্যার আই এম নট পার্ট অব ইট। ইউ আর ডুইিং মিস্টেক” বলে সাথে সাথে চলে আসলাম এবং আমার উপর মহলে বিষয়টি অবগত করেছিলাম।এটা ছিল একটা হাই লেভেলের কম্লিকেটেড কেইস তবে দুই মাস সময় নিয়ে আমি একটি সলিড রিপোর্ট তৈরী করেছিলাম। সেই রিপার্টের কপি নেবার জন্য তৎকালীন ডেট ডিজিএফআই ঢাকা আমাকে ফোন করেছিল……….সেটা আর এক বিরাট ইতিহাস।
বর্তমান প্রসংগে আসি। ডিজিএফআই এর জাতীয় পর্যায়ের ঘাপলা দেখেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসা উচ্ছেদের দিন! আমি ছিলাম অধিনায়ক ঢাকা ডেট এএসইউ। উচ্ছেদের ১/২ দিন পর ঢাকার সব সাংবাদিকদের সেই বাসা পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি সময়টা জেনে সাংবাদিক সেজে সব সাংবাদিকদের সাথে সেখানে প্রবেশ করলাম। আমি যেহেতু উচ্ছেদের দিন সেখানে হাজির ছিলাম তাই ম্যাডামের বেডরুমের ভাংগা দরজাটার দিকে গিয়ে দেখলাম দরজার ভাংগা ছিটকানি নতুন লাগানো হয়েছে তবে আসে পাসে কাঠের গুঁড়া আর ছোট কাঠের অব্যবহারিত অংশগুলো চিৎকার করে জানান দিচ্ছে নতুন ছিটকানির রহস্য! সাংবাদিকগন প্রথমে এসেই দরজায় নতুন ছিটকানির রহস্য জানতে চাইল। কোন উত্তর নেই! আমি আর সাংবাদিক শ্যামল দত্ত প্রথমে ম্যাডাম জিয়ার ড্রেসিং রুমের ফ্রীজে ওয়াইনের বোতল দেখতে পাই। শ্যামল দত্ত আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “হুম উনিতো একটু আধটু ওয়াইন খেতেই পারেন!” আমি পরে জেনেছিলাম কার বুদ্ধিতে কে সেই ওয়াইনের বোতল আর কিছু পর্ন ম্যাগাজিন সেখানে রেখেছিল! একজন সেনা কর্মকর্তা হিসাবে আমি এই কাজের জন্য লজ্জা বোধ করছি!
এনিওয়ে আমাদের পরিদর্শন এবং ব্রিফিং শেষে ডিজিএফআই এর এক কর্মকর্তা সব সাংবাদিকদের উচ্ছেদের ছবি সহ একটি সিডি দিল। আমিও এক কপি পেলাম। যাহোক পরদিন সকালের পত্রিকা খুলে ডিজিএফআই তথা সংশ্লিষ্ট সকলে নাড়া চাড়া দিয়ে বসল। দেশের সকল খ্যাত/অখ্যাত পত্রিকার প্রথম পাতায় বেগম জিয়ার বেডরুমের ভাংগা দরজার ছবি! আমিতো সাথে সাথেই বুঝে গেছি ডিজিএফআই ভুল করে ভাংগা দরজার ছবিও সাংবাদিকদের দিয়ে দিয়েছে। আমি সাথে সাথে সিডিটি বের করে চেক করলাম! যা ভেবেছিলাম তাই। এর মধ্যেই আমার ডাক পড়ল আমার বসের অফিসে, কর্নেল হামিদ স্যার জিজ্ঞেস করলেন সেদিন তিনজন ক্যামেরা/ভিডিও ক্যামেরা হ্যান্ডেল করেছে তার মধ্যে তুমি একজন। আমি বললাম রাইট স্যার তবে এই ঘাপলা করেছে ডিজিএফআই। বিস্তারিত বলার পর সবাই কেমন যেন চুপ। এটা কার দোষ এটা বের করার আর কারো কোন আগ্রহ দেখা গেল না।
কিছুক্ষন পর গদগদ ভাবে মিস্টি হেসে আমাকে ডিজিএফআই এর সংশ্লিষ্ট অফিসার ফোন করে বলল “স্যার আপনার কাছে আমার একটা ছেলে (ডিজিএফআই সদস্য) যাবে একটা নতুন সিডি নিয়ে। কালকে যে সিডিটা আমরা দিয়েছিলাম এটাতে আরও নতুন ছবি আর ভিডিও আছে। আমি বললাম আচ্ছা পাঠাও। পাঠাও বলার দুইমিনিটের মধ্যে নতুন সিডি হাজির, আমিও অভিনয় করলাম আমি কিছু বুঝিই নি বরং নতুন সিডি পেয়ে খুশী হয়েছি!
নেত্রনিউজের নতুন ভিডিওটা আমাকে ব্যাথিত করেছে। আমি চাকুরীজীবনে প্রয়োজনে অসংখ্য ইন্টারোগেসন/ইন্টারভিউ নিজে নিয়েছি এবং এর ম্যানেজমেন্ট করেছি। আমার মতে একজনের আইডেন্টিটি নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ ১/২ দিনের বেশী লাগার কথা নয়। শুধু অদক্ষ দলকানা ব্যাক্তিরাই এটা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সময় নেয় এবং তারা সহজে নিজের দোষ স্মীকার করতে চায় না যার ফলে নির্দোষ ভিক্টিমকে এবং তার পরিবারকে এর পরিনাম ভোগ করতে হয়।
এই ভিডিওতে দেখলাম লে: কর্নেল হাসিন স্যার বলছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমী স্যার এই আয়নাঘরে বন্দি আছেন!
আয়নাঘরের সকল বন্দিদের মুক্তি চাই!
সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত।
প্রসঙ্গত, এ দিকে ডিজিআইএফ এর এই আয়নাঘর নিয়ে এখন তোলপাড় স্যোশাল মিডিয়ায়। তবে আদৌ এর কোন সত্যতা আছে কি না তা নিয়ে রয়েছে বেশ সন্দেহ।