ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় ও আলোচিত অভিনেত্রী মুনমুন। অভিনয় দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নেয়া অভিনেত্রীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তবে হঠাৎ করেই গত বেশ কয়েকবছর সিনেমা জগৎ থেকে নিজেকে অনেকটা আড়াল করে নিয়েছিলেন গুণী এই অভিনেত্রী।
কিন্তু অনেক দিন পর মুক্তি পেল তার নতুন ছবি ‘রাগী’। ছবিতে প্রথমবারের মতো খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাকে। চলচ্চিত্র জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
প্রথমবার ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন। দর্শকদের সাড়া কেমন?
ভালো সাড়া পাচ্ছি। এত মানুষ যে আমার ছবি দেখতে আসবে, তা আমি কল্পনাও করিনি। সেই 2003 সাল থেকে আমি নিয়মিত সিনেমা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অনেক দিন পর দর্শকের সামনে এলাম। সেটাও আলাদা। আমি ভেবেছিলাম মানুষ আমাকে ভুলে গেছে। এর মধ্যে আমি কয়েকটি আলাদা কাজ করেছি। আমরা কয়েকজন মধুমিতা, ছবিমহল এবং নিউ গুলশান সিনেমায় গিয়েছিলাম ‘রাগী’ দেখতে। আমাদের চারপাশের দর্শকদের আগ্রহ আমার ভালো লেগেছে। দর্শক এখনও আমাকে পর্দায় দেখতে চায়, আমি হলে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। নায়িকা থেকে খলনায়ক—দর্শক আমাকে নতুন করে দেখেছেন। ছবির পরিচালককে ধন্যবাদ। এমন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন তিনি। প্রথম দিন কয়েকটি হলে গিয়ে দর্শকের চাপে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।
বলছিলেন, দর্শকদের এখনো আপনার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তাহলে কি এখন থেকে নিয়মিত অভিনয়ে ফিরবেন?
অনেক দিন পর ‘রাগী’ ছবিতে অভিনয় ও কাজ করার মতো ভূমিকা পেলাম। চরিত্রের ওজন আছে। লেডি ভিলেন। ছবিতে আমার এন্ট্রিও দারুণ হয়েছে। এরকম গল্প বা চরিত্র পেলে অবশ্যই কাজ করব। এখন যদি আমাকে দু-তিনটি সংলাপ দিয়ে কলাগাছের মতো দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ছবিতে কিছুই করার সুযোগ থাকত না। তবে আমার কাছে কাজ করার মতো কোনো চরিত্র থাকলে অবশ্যই করব। কারণ আমি একজন শিল্পী। এটা একসময় আমার পেশা ছিল। মাঝখানে হয়তো তেমন ভালো অফার পাইনি। এর জন্য আমি মাঝে মাঝে কাজ করেছি। তবে নিয়মিত কাজ করতে আরও কিছু সময় নিতে চান। আগে দেখা যাক ‘রাগী’ ছবির মতো চিত্রনাট্য ও চরিত্র আসে কি না।
আমার প্রথম শুটিংয়ের ছবি ‘মৌমাছি’ কিন্তু মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘আজকের সন্ত্রাসী’। এটি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। এরপর আমার ছবি একের পর এক হিট হতে থাকে। একজন শিল্পী একের পর এক হিট হলে পরিচালক ও প্রযোজকরা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অজান্তে শত্রুও তৈরি হয়। কিছু পরিচালক ও প্রযোজক লাভের চেষ্টা করেন। তারা লাভের আশায় আমার সিনেমাগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমি নিজে কোনো অন্যায় করিনি। কিন্তু এক শ্রেণীর মুনাফাখোর আমার কাজে অন্যায় জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারাই আবার আমার উপর অন্যায়ের পাথর ছুড়ে মারে। যেসব ছবিতে অ্যাকশন নায়িকা হিসেবে কাজ করেছি, সেখানে আরও কাট-পিস সংযোজন হয়েছে। তখন জায়গাটা নিরাপদ মনে করিনি। ফলে এক পর্যায়ে চলচ্চিত্র ছাড়তে বাধ্য হই।
কিন্তু সে সময় আরও কিছু নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে আপনাকেও অশ্লীল ছবির নায়িকা উপাধি দেওয়া হয়েছিল। আপনি কি বলেন?
এ নিয়ে আর কত কথা বলব? তখন দর্শকরা আমার নামে সিনেমা হলে আসতেন। কারণ, দর্শক তখন জানতেন মুনমুন একজন অ্যাকশন নায়িকা, অভিনয়ে ভালো, ফাইটিংয়ে ভালো, নাচে ভালো। এসব কারণে আমার ছবি দেখতে হলে মানুষ ভিড় করতো। এবং অশ্লীলতার বিষয়টি পরিষ্কার করুন। আমি ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে নিয়মিত কাজ করেছি। কিন্তু তখন সিনেমায় অশ্লীলতা তেমন ছিল না। ২০০৬, ২০০৭ সালের দিকে সিনেমায় অশ্লীলতার ঢেউ ওঠে। সেদিনই আমি চলচ্চিত্র ছেড়েছিলাম। আমার ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ এর ছবিগুলো দেখুন, আপনি কোথাও অশ্লীলতা পাবেন না। আমি কি কোন ধরনের হট কাপড় পরেছি? খোলামেলা পোশাক পরেছি? প্রমাণ কোথায়?
আমি যে পোশাকে অভিনয় করতাম, সে সময়ের সব নায়িকা একই পোশাকে অভিনয় করতেন। আমার সেই সময়ের সিনেমাগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। একটি চক্র আমার পেছনে লেগে আমার এই সর্বনাশ করেছে । ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, শাকিব খান, আমিন খান, নাঈম, রুবেল, বাপ্পারাজসহ দেশের এই গ্রেডের অনেক নায়কের বিপরীতে আমি নায়িকা ছিলাম। এ সময়ও আমাকে বারবার প্রশ্ন করা হয় অশ্লীলতার বিষয়টি নিয়ে? না জেনে, না বুঝে অনেকেই আমার দিকে আঙুল তুলেছেন। এটা খুবই কঠিন. আমার ইতিহাস সবার জানা উচিত। সেই সময়ে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াৎ, মালেক আফসারীর মতো গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। তারা অশ্লীল ছবি বানায়নি। তখন আমার ছবি হিট হচ্ছিল। একদল জানতে চেয়েছিল কিভাবে আমার এই অশ্লীলতার মত বদনাম দেওয়া যায়। তারা সেটাই করেছে।
নতুন সংসার শুরু করবেন না?
যেকোনো কারণেই হোক, আমার সংসার টেকেনি। আমার দুইটা ছেলে আছে. বড়টির নাম যশ, সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছোটটির নাম সিব্রাম, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তবে অবশ্যই বিয়ে করব। আমি একা থাকতে পারি না। থাকা ঠিক হবে না। সময় হলে নতুন পরিবার সম্পর্কে জানাব।
‘মৌমাছি’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় পা রাখেন চিত্রিনায়িকা মুনমুন। এরপর আর কখনো পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক পর ব্যবসায় সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।