বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। তবে যেমন এ নিয়ে আছে নানা ধরনের আলোচনা রয়েছে সমালোচনাও।এ দিকে নতুন এক সমালোচনা শুরু হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে।ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের (ভিএনএসসি) অধ্যক্ষ কামরুন নাহার (মুকুল) ও এক অভিভাবকের মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কথা বলার একপর্যায়ে অধ্যক্ষ ওই অভিভাবককে বলেন, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো … বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব, আমি শুধু ভিকারুননিসা না আমি দেশছাড়া করব।’ ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপের অডিওটি হাতে রয়েছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড ধরে অধ্যক্ষ ও ভিএনএসসির অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যে চলা ওই কথোপকথন দেশ রূপান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
কামরুন নাহার : লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না করি কার বাপের কী? কোন … বাচ্চার কিছু যায় আসে?
টিপু : না …
কামরুন নাহার : কোন …র বাচ্চার যায় আসে কিছু? যদি আমি অফিস না করি? আমি জানতে চাই, কোন … পোলার কী যায় আসে?
টিপু : এইডি তো আপনার জিবির (গভর্নিং বডি) লোক।
কামরুন নাহার : কোন … পোলার কী যায় আসে? আমি রাজনীতি করা মেয়ে আমি কিন্তু ভদ্র না।
টিপু : না…
কামরুন নাহার : আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। আমি সেই দিকটায় আলাদা পরিচয়।
টিপু : এইডি তো আপনের…
কামরুন নাহার : ওই … পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।
টিপু : না, আপনের বোধহয় ওই যে জিবির মেম্বারে এইগুলা ছড়ায় কি না দেখেন।
কামরুন নাহার : কোন মেম্বার আর কোন মার ভাতার আমার দেখার কিন্তু বিষয় না। কোনো … বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব (৪০ সেকেন্ডের জায়গাটা অস্পষ্ট)। আমি শুধু ভিকারুন্নিসা না, আমি দেশছাড়া করব।
টিপু : ঠিক আছে আপা। এইটা ভালো।
কামরুন নাহার : এবং আমি অনেক সহ্য করেছি। এই কালকে সচিবের (শিক্ষা সচিব) কাছে বলে এসেছি। সচিব বলেছে মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার (৫২-৫৪ সেকেন্ড বোঝা যাচ্ছে না)। তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে।
টিপু : আইচ্ছা।
কামরুন নাহার : আর কোনো … বাচ্চা তদন্ত কমিটি করলে আমি কিন্তু দা দিয়ে কোপাবো তারে সোজা কথা।
টিপু : হা হা হা।
কামরুন নাহার : আমার … আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।
টিপু : আফনে আবার…
কামরুন নাহার : কিন্তু কিচ্ছু লাগবে না। কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে পিটাব।
টিপু : আফনে আবার আগের চরিত্রে চইলা যাবেন মুকুল আফা। হা হা…
কামরুন নাহার : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ যাব। যাব। আমি কিন্তু একদম, আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। সারারাত পিস্তল আমার বালিশের নিচে থাকত। আমি কিন্তু…
টিপু : আমি নাজমারে (যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার) ফোন করে কইতাসি মুকুল আফা চেইতা গেসে তুমি থামাও। তোমার জিএস রে (হাসি)।
কামরুন নাহার : হ্যাঁ। নাজমা আমারে বলসে। যে কেউ তরে ডিস্টার্ব করলে আমারে খালি বলিস। আমার নাজমাও লাগবে না। নাজমার গ্রুপের শুধু মেয়ে কালকে আমারে পরশু দিন অফিসে বসছি পরে আমারে বলতেছে আপা। আসবেন আমরা কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে রাইখা পিটাব তারে। তার এত দুঃসাহস আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, আর আপনাকে ডিস্টার্ব করে। ঘরের থেকে টাইনা বাইর কইরা রাস্তার মধ্যে পিটাইয়া কাপড় খুইলা ফেলাব। আমার সম্পর্কে লেখে, আমার ঢাকা পতেঙ্গা ফেয়ারেল গলিতে চাইনিজ খাবার খাওয়াইসি। আর আমার সম্পর্কে লেখে, প্রিন্সিপাল অফিস করে না।
কোন কুত্তার বাচ্চার মায়ের কোনে লিখেছি আমি। আমি আমার অফিস করি সচিবকে বইলা। করোনার মধ্যে, করোনার মধ্যে এই। করোনার মধ্যে আমার বারান্দার অফিসে আমি দরজা খুলে বসে থাকি, আমার চেয়ার টেবিল নিয়ে। আমি অফিসে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে চলে আসি কর্মচারীরা ঠিকমতো আছে কি না। করোনার মধ্যে অফিসের নিয়ম নাই। আমাকে নিষেধ করছে সারা বাংলাদেশ যে করোনার মধ্যে তোমরা লকডাউনের মাঝে অফিস খোলা রাখবে না তাহলে করোনা ছড়াবে। কোন … বাচ্চার কী যায় আসে? কোন …র বাচ্চার কী যায় আসে? আমি অফিসে না গেলে …বাচ্চারা … বাচ্চারা কি আমার জায়গাটায় মজা পায়? কোন … বাচ্চারা চায় যে আমি অফিসে বইসা অফিস করি, তাদের অফ করেন। …র বাচ্চা।
টিপু : ঠিক আছে আপা।
কামরুন নাহার : আমি রাজনীতি করা মেয়ে।
টিপু : আমি তো আছি আফনে এত…
কামরুন নাহার : আমি কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে আসছি বলে কিন্তু…
টিপু : আফনের চাইর নাম্বার গেইটের অপজিটে হইল আমার বাসা। এত চিন্তা করেন ক্যান? আমার দুই মিনিট লাগব যদি বসুন্ধরা…।
কামরুন নাহার : আমি কোনো চিন্তা করি না। কারণ আমি নিজেই শক্তিশালী। কোনো… কথায় আমি চলি না। কোনো… বাচ্চার কথায় আমি চলি না। আমি নিজেই কিন্তু শক্তিশালী। দলটার আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম। মনে রাইখেন এই দলটা এখন সরকারে। যতদিন এই দলটা আছে ততদিন আমার পাওয়ার আছে। আমি কিন্তু … বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার লাগবে না আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁইড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে। আমার সম্ভবত তিন সপ্তাহ যেন দাঁড়াতে সাহস না পায়। আমি কিন্তু কোনো অন্যায়ের সাথে বসবাস করি না এইডা মনে রাইখেন।
টিপু : তয় নাসির [গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন (মাধ্যমিক)] যে…
কামরুন নাহার : আমার নামে যে লেখে … বাচ্চারে আমি অনেক সহ্য করছি।
টিপু : তয় নাসির যে…
কামরুন নাহার : সচিব স্যারকে বলছি অসভ্যরা আমার পেছনে লাগে, আমারে আপনি ঢাকা বোর্ডে পোস্টিং দিয়ে দেন। স্যার বলছে, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করে। আমাকে যেহেতু ধরতে গেলে থাকতেই হবে তাহলে কুত্তার বাচ্চাদের সাথে লইড়াই আমি থাকব।
টিপু : না… নাসির যে এত চিল্লাচিল্লি করল আপনি নাসিররে কিছু কইলেন না ক্যান?
কামরুন নাহার : কোনো নাসিররে আমি চিনি না। নাসিররে কী বলব তা আমি বুঝি। কেউ যেন আমার পেছনে লাগে না আপনি নিষেধ কইরে দিয়েন। আপনার সঙ্গে যারাই বলবে নিষেধ করে দিবেন।
টিপু : না, তা তো বলবই। আফনে রোববারে ইস্কুলে আইলে আমারে একটু ফোন কইরেন।
কামরুন নাহার : স্কুল করব কি না করব তা আমার এষতিয়ার, আমি বসব কি না বসব। আমি সচিবকে বলছি, সচিব স্যার আমি বাসায় বসে অফিস করি। বলে, যে বাসাটা দেয়া হইসে বাসায় বইসা অফিস করবা। যখন সুবিধা অফিসে যাবা এখন করোনার মধ্যে। তুমি এই নিয়া চিন্তা কইরো না। আমরা অফিস করি না মাসে একবার-দুবার আসি জরুরি মিটিং থাকলে। আর … বাচ্চারা সারাক্ষণ কয় আমি অফিসে যাই না, অফিসে যাই না।
ফাঁস হওয়া এই অডিও কথোপকথনকে ভিএনএসসির দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অনেক শিক্ষক, অভিভাবক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে গভর্নিং বোর্ডের একাধিক সদস্য বলেন, এই অধ্যক্ষ এ বছরের প্রথম দিন যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানে আসেননি বললেই চলে। কেউ যদি তাকে প্রতিষ্ঠানে আসার বিষয়ে অনুরোধ করেন, তিনি (কামরুন নাহার) সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি শুধু শিক্ষক নন, বড় রাজনীতিক এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মন্ত্রী, সচিবালয় এবং সরকারের শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত তার পক্ষে আছে বলেও দাবি করেন।
গভর্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন (মাধ্যমিক) বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিন যোগদান করেছেন কামরুন নাহার। তিনি শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানবিমুখ। করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা এবং অভিভাবক মারা গেছেন। অনেক শিক্ষার্থী আছে কেউ ফুল ফ্রি বা হাফ ফ্রির আবেদন করে। সেগুলোর কোনো সুরাহা করতে অভিভাবকরা অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। গত ছয় মাসে অধ্যক্ষ কোনো প্ল্যান করেননি। অভিভাবকরা আমাদের কাছে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে আসে। আমরা অধ্যক্ষকে বললে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। এর আগে তিনি অনেকের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমরা বিষয়টি গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমানকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, অডিওটি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন। সভাপতি যা বলবেন আমরা তাই মেনে নেব।’
অভিভাবক আতিকুর রহমান দর্জী বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মতো স্বনামধন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের ভাষা এটা হতে পারে না। আমরা সাধারণ অভিভাবকরা অডিওতে তার ভাষা শুনে খুবই মর্মাহত। তিনি যেভাবে যুবলীগ-ছাত্রলীগ আর মন্ত্রী-সচিবের নামে হুমকি দিয়েছেন, এতে আমরা যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি তারা চরমভাবে বিব্রত।’
মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১০ জুন কামরুন নাহারের সঙ্গে আমার কথা হয়। কিছুক্ষণ ভালোভাবে কথা বলার পরই অধ্যক্ষ এভাবে কথা বলতে শুরু করেন। এর কয়েক দিন পর অধ্যক্ষ নিজেই ১৫ বারের বেশি আমাকে ফোন করেন। তিনি আমাকে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে অথবা তার বাসায় দেখা করতে বলেন। দুই খানেই সিসিটিভি ক্যামেরা আছে এবং কী থেকে কী হয়, এই ভেবে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। কারণ এমনিতেই সবাই বলে আমি আপনাকে শেল্টার দিই। তখন তিনি আমাকে বলেন, তাহলে অন্য কোনো জায়গায় দেখা করি। এরপর অফিসার্স ক্লাবে তার সঙ্গে দেখা হয়।’
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য ভর্তিবাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে মুকুলকে (কামরুন নাহার) মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। তাকে তারা অনেক হুমকিধমকি দিয়েছে। মুকুল আমাদের সবাইকে বলেছে। মন্ত্রণালয়েও সে বলেছে। সে ভিকারুননিসায় থাকতে চায় না। তাকে অনেক উত্তেজিত করে এই অডিও নিয়েছে। সেটাও সুপার এডিট করেছে বলে জানি। সে অনেক অসুস্থ। রমজানের সময় তার হার্টে তিন-চারটি রিং পরানো হয়েছে। কেন এই অডিও বের হয়েছে সেটাও বের করা দরকার। তবে আমি অডিওটি শুনিনি।’
গভর্নিং বডির সভাপতি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞাসা করুন।’ তবে গতকাল রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত বারবার ফোন করেও অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।
ভিকারুননিসায় গরুর হাট, অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি : গত ১৯ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গরুর হাট বসিয়ে অনিয়ম করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের অপসারণ দাবি করেন অভিভাবকদের একাংশ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভিএনএসসি অভিভাবক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মজিদ সুজন বলেন, ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফখরুদ্দিন বিরানি হাউজ অ্যান্ড ডেকোরেটর অবৈধভাবে গরু-ছাগলের হাট বসায়। সেটি অভিভাবকদের নেতৃত্বে গত শুক্রবার (১৬ জুলাই) উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের মদদে অবৈধ গরু-ছাগলের হাট বসানো হয়েছিল। এজন্য অধ্যক্ষকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে তিনি বলেন, কামরুন নাহার যোগদানের পর থেকে কলেজের বাসভবনে থাকলেও তিনি কখনো নিজ অফিসে বসেন না। অভিভাবকরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও কারও সঙ্গে তিনি দেখা করেন না। ভিকারুননিসার যেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবক মারা গেছেন তাদের বিনা বেতনে পড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও সে বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি অধ্যক্ষ। সভাপতি হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্কুলের জন্য সময় দিতে পারেন না বলে অধ্যক্ষ বেপরোয়া হয়ে অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা বলেন, ভিকারুননিসার বেইলি রোড ক্যাম্পাসের মধ্যে ফখরুদ্দিনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় স্কুল অ্যান্ড কলেজ খোলা থাকলে ক্যাম্পাসে তাদের ব্যবসা চলে। তারা অভিযোগ করেন, ১১ নম্বর গেট দিয়ে মেয়েদের প্রবেশ করতে হয়। এ সময় ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির কর্মচারীরা খালি গায়ে ঘোরাফেরা করে। নোংরা পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর। আমরা অভিভাবকরা তার অবসান চাই। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত টিউশন ফি আদায় করা হলেও স্কুলে বিভিন্ন ধরনের ময়লা পড়ে এডিস মশার জন্ম নিলেও তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। স্কুলের প্রতি তার কোনো আন্তরিকতা নেই।
মিজানুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘আমরা অভিভাবক হিসেবে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা যারা নষ্ট করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড ডেকোরেটরকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাই। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কামরুন নাহারের অপসারণ চাই।’
গভর্নিং বডির অনিয়ম তদন্তে শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি : ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিবাণিজ্য, উন্নয়নকাজে আর্থিক অনিয়ম ও শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগ তদন্ত করতে গত ১৮ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এ সংক্রান্ত চিঠি ১৯ জুলাই স্কুলে পাঠানো হয়।
বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভর্তিসহ কলেজের যাবতীয় কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ, ভর্তিবাণিজ্য ও কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজে আর্থিক অনিয়মের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাকে আহ্বায়ক করে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) মো. হেলাল উদ্দিন ও উপ-কলেজ পরিদর্শক মুহাম্মদ রবিউল আলমকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শন করে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
এ দিকে এসব নিয়ে এখন আলোচনা সমাচলোনা তুঙ্গে রয়েছে। এ নিয়ে খোজ খবর করে জানা গেছে, স্কুল-কলেজ ও সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত মোট সাতজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে। তারা হচ্ছেন মাধ্যমিকের অভিভাবক প্রতিনিধি সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন ও ওয়াহেদুজ্জামান মন্টু, কলেজ স্তরে অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান খোকন, বাদরুল আলম, মোর্শেদা আক্তার এবং সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত রীনা পারভিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস। তারা বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত ভর্তি নিতে অধ্যক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। অধ্যক্ষ তাতে রাজি না হলে তার সঙ্গে অশোভন আচারণসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়।