Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আমি ওই বাচ্চার পরিচয় দিবো না, নাসিরের বাচ্চা নাসিরের কাছে ফেরত দিয়ে দেবো: রাকিব

আমি ওই বাচ্চার পরিচয় দিবো না, নাসিরের বাচ্চা নাসিরের কাছে ফেরত দিয়ে দেবো: রাকিব

দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনা হলো ক্রিকেট স্টার নাসির হোসেন ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানবালা তামিমা সুলতানার বিয়ের ঘটনা। ব্যবসায়ী রাকিব হাসান নামের এক যুবক নিশ্চিত করে বলেন যে, তামিমা অন্যকে বিয়ে করলেও তামিমা এখনো তার স্ত্রী এবং তাদের বিবাহিত জীবনে তুবা মণি নামের একটি মেয়েও রয়েছে।

এদিকে তামিমা জানিয়েছেন, রাকিবের সাথে তার অনেক আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। কিন্তু রাকিব তামিমার এই দাবিকে পুরোপুরি অস্বীকার করে ক্রিকেটার নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- নাসির তামিমার বিয়ে সম্পূর্নভাবে অবৈধ এবং তারা বিবাহ বহির্ভূত ব্যভিচারে লিপ্ত। এদিকে, গতকাল (সোমবার) অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর খবর প্রকাশিত হয় যে, তামিমা অন্তঃসত্ত্বা। যে বিষয়টি আদালতের এজলাসে উপস্থাপন করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে রাকিব প্রশ্ন তোলেন- তামিমা এখনো আমার স্ত্রী। গত ১০ মাস আমি তার সাথে একা সময় কাটাইনি। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সে গর্ভবতী হলো? ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে তার বিয়ে অবৈধ। সে কারণেই মামলা করেছি। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে আমার অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। আদালতে এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আমার স্ত্রী তামিমা কীভাবে অন্য পুরুষের সঙ্গে থেকে মা হতে চলেছেন! এখন আমার একটাই প্রশ্ন- তামিমা আমার স্ত্রী, তাহলে তার গর্ভে সন্তান কার?

নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ বিয়ের’ মামলা তদন্ত শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দাখিল করা চার্জশীটের ভাষ্য অনুযায়ী, তামিমা রাকিবকে তালাক দেননি। লিগ্যালভাবে রাকিব তালাকের কোনও নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জাল জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেয়ার ফলে তামিমা সুলতানা এখনও রাকিবের স্ত্রী বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমার বিয়ে অবৈধ।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করে রাকিব হাসান দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যমকে বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে গতকাল একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে তামিমা। যেখানে তিনি নিজেকে গর্ভবতী বলে উল্লেখ করেছে। তবে আদালতে সেটি গ্রহণ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আমি বারবার বলতে চাই- তামিমা সুলতানা এখনও আমার স্ত্রী। আমি তাকে ডিভোর্স দেইনি।

তামিমা সুলতানা আমার স্ত্রী থাকা অবস্থাতেই ক্রিকেটার নাসির হোসেন তাকে অবৈধভাবে বিয়ে করেছে। যেটি করতে গিয়ে তারা ভুয়া তালাকনামা তৈরি করেছে। নাসিরের সঙ্গে আমার স্ত্রী তামিমার বিয়ে অবৈধ হওয়া আমি মামলা দায়ের করি। যেটি এখন আদালতের ট্রায়ালে রয়েছে। সেই অবৈধ বিয়ে করার মামলা নিষ্পত্তি না হতেই নাসির-তামিমা ১০ মাস এক সঙ্গে অবস্থান করে। যার ফলে তামিমা এখন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর ফলে জটিলতা আরও বাড়লো। আমি যেহেতু সত্য, সেহেতু প্রত্যাশা করবো আদালত নিশ্চই ন্যায় বিচার করবেন এবং আমার স্ত্রী তামিমাকে আমার কাছে ফেরত দিবে। তবে যদি তা’ই হয় তামিমার গর্ভে থাকা সন্তানের দায়-দায়িত্ব আমি নিবো না। কারণ গত ১০ মাস আমার সঙ্গে তামিমা ছিলো না, এখন সে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি মামলা দায়ের করার ৪ মাস পর তামিমা গর্ভবতী। এ বিষয়টিও নিষ্পত্তি করতে নিশ্চই আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে যদি প্রমাণ হয় ওই সন্তান নাসিরের, তাহলে নাসিরের কাছেই ওই সন্তান ফেরত দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি বলবো- নাসিরের সঙ্গে তামিমার বিয়ে অবৈধ, ফলে তারা এখন ব্যাবিচারে লিপ্ত রয়েছে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে গর্ভে ধারণ করা সন্তানও অবৈধ। অথচ, তামিমার সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে তুবা মনি নামের আমার একটি পরীরমতো কন্যা সন্তান রয়েছে। মা হয়েও সেই সন্তানের খোঁজ খবর নিচ্ছে না তামিমা। এর ওপর আবার নতুন একটি সন্তানকে অবৈধভাবে পৃথিবীতে এনে বেকায়দায় ফেলার পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। আদালতের সিম্পেথি পাওয়ার জন্য নাসির-তামিমা এমনটা করেছে।

রাকিব আরও বলেন, তামিমা নিজ সন্তান তোবাকে কষ্ট দিচ্ছে, এরমধ্যে আরও একটি সন্তান গর্ভ ধারণ করেছে। এটা কি অপরাধ না। যে সন্তান পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় আছে, সে কাকে বাবা পরিচয় দিবে? কার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে সে?

আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আমি ওই বাচ্চার পরিচয় দিবো না। নাসিরের বাচ্চা নাসিরের কাছে ফেরত দিয়ে দেবো।

যা বললেন আইনজীবী

ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া তামিমা সুলতানা তাম্মীর সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেছেন, ‘তামিমা আদালতে বলছেন, তিনি ৬ মাসের গর্ভবতী। যদি তাই হয় এবং রাকিব মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে রাকিবের ওপর তামিমার ভবিষৎ এই সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্বের ভারও এসে বর্তাবে। এখানে জটিলতার মধ্যে আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো।’

গতকাল সোমবার নাসির ও তামিমার জামিন শুনানি শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘আদালতে নাসির ও তামিমার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এ মামলাটি এরই মধ্যে বিচারিক আদালতে বদলি হয়ে এসেছে। মামলায় আজ আসামিপক্ষ ৩টি পৃথক আবেদন করেছে। সেগুলো হলো- জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ, অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর সময়ের আবেদন এবং নাসির ও তামিমাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি। বিচারক প্রথম দুটি আবেদন গ্রহণ করলেও শেষের আবেদনটি গ্রহণ করেননি।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘আদালতে আজ তামিমা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেছেন, তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে সে কাগজটি যেহেতু আমরা দেখিনি, তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করছি না। আদালতে তামিমা বলেছেন, তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু যেখানে স্বামীর বৈধতার বিষয়টিই এখনও মীমাংসা হয়নি, সেখানে তামিমার গর্ভের সন্তান নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। যদি রাকিব এ মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে এ সন্তানের ভরণ-পোষণের বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে, নাসির স্বামী হিসেবে বৈধতা না পেলে তামিমার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’

ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘‘‌বিষয়টি খুব বিব্রতকর। এরই মধ্যে তামিমার আগের সন্তান তুবা মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত এবং আরেকজন সন্তান যদি সত্যিই এসে থাকে, তাহলে এখানেও একটা জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ মামলাটি হলো একটা বিয়ে থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে’। এটা নিয়েই বিচার চলছে। সে অবস্থায় আমরা যদি সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারায় আসি, তাহলে ‘যার সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান এবং যিনি স্বামী হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, তাকেই সন্তানের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।’ এখানে রাকিব যদি মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে রাকিবের ওপর সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্বের ভার এসে বর্তায়। এখানে জটিলতার মধ্যে আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো।’

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর নাসির ও তামিমা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে হাজির হয়ে জামিন পান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে এ মামলায় সমন জারির নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার তদন্তে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, সৌদিয়া এয়ার লাইন্সের বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মী এবং তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ বিষয়ে গনমাধ্যমকে বলেছেন, ‘২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর (রাকিব হাসান) সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, তিন লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তাদের এক মেয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বয়স আট বছর।’

মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন বিমানবালা। তিনি সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো।

মামলায় বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সঙ্গে ২ নম্বর আসামির (ক্রিকেটার নাসির) কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এ ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীকালে পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হন।

এছাড়াও, তাদের হলুদ এবং বিবাহোত্তর সংবর্ধনা যথাক্রমে ১৭ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয়েছিল, যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করাও হয়েছে।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, বাদীর সঙ্গে তামিমার বিয়ের সম্পর্ক চলাকালীন নাসিরের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে যুক্ত হন। নাসির বাদীকে মোবাইলে কল করে জানান যে, তিনি পুরো বিষয়টি অবগত আছেন এবং তামিমা তার সঙ্গেও রয়েছেন। বাদীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় তামিমা নাসিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, যা ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনগত দিক থেকে সম্পূর্ণরুপে অবৈধ। অবৈধ বিয়ের সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়টি দেখিয়ে অভিযুক্তের সঙ্গে শারী’রিক মেলামেশা করেছে, যেটা একটি জঘন্যতম ব্যভিচার। ‘

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে যে, “অভিযুক্তদের এ ধরনের অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের জেরে বাদী ও তার নাবালিকা কন্যা গুরুতরভাবে মানিসক আঘাত পেয়েছেন।” আসামীদের এই ধরনের হীনকর কর্মকান্ডের জন্য বাদীর চরমভাবে মানহানি হয়েছে যে বিষয়টি বাদীর জন্য একটি বড় ধরনের অপূরণীয় ক্ষতি।

 

 

 

 

 

About

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *