সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠে বিভিন্ন মহলে। তার বক্তব্যে দায় সরকার নিতে চায় না এমনকি আওয়ামীলীগের কেউ নয় বলে দাবি করেন ক্ষোদ প্রেসিডিয়াম সদস্য। এ পরিস্থিতিতে তাকে নিয়ে না বিতর্ক চলচ্ছে দলের ভিতর। অনেকের প্রশ্ন দায়্ত্বিশীল পদে থেকে এমন বক্তব্যের পরও এখনো্ তিনি কিভাবে দায়িত্বে থাকেন। তার এই দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে বিরোধ দলগুলো মন্তব্য করে কঠোর সমালোচনা করে। জনদায় থাকলে মন্ত্রীরা এত বেফাঁস কথা বলতেন না বলে মন্তব্য করে বিশিষ্টজনেরা।
সামনে নির্বাচন। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। কিন্তু কথাগুলো মাঠের চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের একাধিক মন্তব্য ‘আগুনে ঘি ঢালা’র মতো’।
এসব মন্তব্যে আলোচনা-সমালোচনায় যেমন বিদ্ধ হচ্ছেন মন্ত্রী, তেমনি সরকারও বিব্রত। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীশক্তিও লুফে নিয়েছে এ সুযোগ। তারাও একের পর এক বাক্যবাণে বিঁধছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বিশিষ্টজনেরা কী ভাবছেন? এ বিষয়ে মতামত নেন সিনিয়র আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সাবেক নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের।
ডঃ শাহদীন মালিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “একজন রাজনীতিবিদ সারাদিন বিভিন্ন কথা বলেন। এর মধ্যে দু-একটি কথা বেফাঁস হতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। ভুল হতেই পারে।’
কিন্তু বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এত পরিমাণ বেফাঁস এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জনগণের প্রতি সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। জনদায় থাকলে মন্ত্রীরা এত বেফাঁস কথা বলতেন না। মুখ ফসকে এভাবে জনগণের সঙ্গে তামাশা করে কথা বলা যায় না।
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘এক দেশ অন্য দেশকে প্রভাবিত করতে চাইবে। বড় দেশগুলো সব সময় ছোট দেশগুলোকে বাগে আনতে চায়। কূটনৈতিক ধারা সাধারণত এমনই হয়। রাজনীতিতে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে ইউরোপ ও আমেরিকা। এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পাশে থাকুক, তা যুক্তরাষ্ট্র চাইতেই পারে। তারাও চাপ দিতে পারে। কিন্তু আসল বিষয় হলো বাংলাদেশ কীভাবে তার ভূমিকা সহনশীল রাখবে। ভূ-রাজনীতিতে এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সমর্থনও চাই। যেমন বাংলাদেশ মিয়ানমার ইস্যুতে ভারতের সাহায্য চাইছে এবং এটি দীর্ঘদিন থেকেই।
‘কিন্তু অন্তরালের বিষয় এভাবে প্রকাশ্যে এনে বলে দেওয়াটা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ দাঁড় করায়। আমরা ধরে নিচ্ছি যে সুইস রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন তা বাস্তবতার ভিত্তিতে নাও হতে পারে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন যে, সুইস রাষ্ট্রদূত ‘মিথ্যা’ বলেছিলেন। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য কূটনীতিক সম্পর্কে এ কথা বলতে পারেন না। বলা যায় না। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন যে কেউ তার দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।
তার এমন কথাবার্তার জন্য দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া দরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যা বলছেন তা আরও বিস্ময়কর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের না এমন কথাও শোনালেন। তাহলে তিনি কোন দলের? তার সরে দাঁড়ানো বা সরিয়ে দেওয়া দরকার। ভারতও হয়তো এ ধরনের বাজে মন্তব্যে অস্বস্তি বোধ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জনঅধিকারকে দ্বিধায় ফেলেছে। যোগ করেন শাহদীন মালিক।
ব্রি. জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তার ভিত্তিতে আমি আসলে কিছু বলতে চাই না। আমি আসলে এসব নিয়ে আলোচনা করি না।মন্ত্রীরা অসংলগ্ন কথা বলছেন, মানুষ শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
ডাঃ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ভারত একটি বড় দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক শক্তি আছে। এই সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রভাবশালী দেশগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রভাবিত করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সত্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে বা করতে চায়। এর প্রমাণ মেলে যখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দেন। ক্ষমতায় থাকতে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে একটা ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল বাস্তবতা মনে করেন।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয় নিয়ে শুধু দল নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাকে এখনো বহাল রাখা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।