চা হলো একটি তরল পানীয় খাদ্য। চা খেয়ে মানুষ তাদের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে থাকে। চায়ের প্রচলন হয় হাজার হাজার বছর আগে। বিশ্বের সব দেশেই চা খেয়ে থাকে মানুষ। সম্প্রতি বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা তাদের মজুরী বৃদ্ধির জন্য ধর্মঘটে নেমে ছিলেন। আর সেই বিষয়টি নিয়ে খুব অরাজকতারও সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কাঁদবেন না, আমি আসব, চাও খাব।
কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিক লাকী নারায়ণ প্রধানমন্ত্রীর দিকে এক চোখে কথা বলছিলেন। চায়ের আমন্ত্রণ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লে শেখ হাসিনা অন্য চোখের চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেন।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের কর্ণফুলী চা বাগান থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন এ শিল্পের শ্রমিকরা।
এ সময় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া চা বাগান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা, সিলেট সদরের লাক্কাতুরা ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
চারটি চা বাগান শেষে চট্টগ্রামের চা বাগানের শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের মনের কথা বলেন।
কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিক লাকী নারায়ণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন
এরই মধ্যে কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিক লাকী নারায়ণ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “আপনাকে কী বলব যে আমরা ১২০ টাকা বেতনে দিন কাটাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় আমরা চা। বাগানের লোকেরা বাগানে কাজ করে।
“আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। বাগানে স্কুল আছে কিন্তু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। এর উপরে পড়তে গেলে অনেক দূর যেতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে যেতে পারে না। আপনি যদি আমাদের এখানে একটি স্কুল করতে পারেন।”
লাকী নারায়ণ বললেন, “তুমি বলেছিলে তোমার বাবা-মা নেই। আমারও বাবা-মা নেই। একা এমনকি বিবাহিত নয়। এক চোখেও দেখি না। এক চোখে, আমি এখন তোমার সাথে কথা বলছি।
“তুমি একবার আমাদের বাগানে আসবে। আমি চাই তুমি আমাদের বাগান থেকে এক কাপ চা খাও।”
লাকী নারায়ণ কান্নায় ভেঙে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, কাঁদবেন না, আমি এসে চা খাব। আমি তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আমি বলব, চোখের চিকিৎসা করা উচিত।”
এরপর চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান মুনমুন ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “আমি একজন আবাদ শ্রমিকের ছেলে। এখন কর্ণফুলী চা বাগানে নবনির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আমি ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি।
“আপনি যে লড়াইয়ে একটি উন্নত নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান সেই লড়াইয়ে আমি একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে চাই। তুমি একবার আমাদের বাগানে আসবে। আপনারা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন, আশা করি ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি শুনে খুবই খুশি। আপনি নিজে পড়াশোনা করেছেন। এখন আপনি আবার অন্যদের শেখাচ্ছেন।”
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিকের ছেলে মুনমুন ঘোষ।
এরপর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা বাগানের নারী-পুরুষের মতো চা মেয়েরাও (শিশু) আপনাকে দেখতে আগ্রহী।
“তারা আপনাকে নাচ দেখাতে চায়। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কোন মুদ্রা জানেন? তারা বলেন, আমি যতটুকু জানি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নাচতে দেখাব। মাত্র দুই দিনের প্রস্তুতি নিয়ে তারা এই নৃত্য পরিবেশন করছে।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে শিশুদের নাচতে দেন। পরে তিনি আরেকটি নৃত্য দেখতে চাইলে শিশুরা চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গানে নৃত্য পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, “চট্টগ্রামের ২১টি চা বাগান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার জন্য চা পাঠিয়েছেন, টেবিলে সাজানো কাপের সারি দেখা যাচ্ছে। আপনি অনুমতি দিলে আমরা সেগুলো পাঠাতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি চা পছন্দ করি। নিয়মিত চা পান করুন। অবশ্যই পাঠাবেন।”
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের আবাসন, জমির অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে চা বাগানের শ্রমিকরা খুশি হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী হলেন মানবতার মা আর তার এই গউনের কথা বিশ্ব জুরে সমাদৃত। বাংলার মানুষেডর প্রতি তার এতটাই ভালোবাসা রয়েছে যে তিনি তাদের দুঃখ-কষ্ট কখনই সহ্য করতে পারেন না। সব সময় সাধারণ মানুষকে নিয়ে তিনি ভাবেন কিভাবে তাদের জীবন মান উন্নত করা যায়।