বাবা মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। সংসারের হাল ধরতে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন মা ফাহিমা আক্তার। নিজ দায়িত্বে পুরো সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। পরম যত্বে আগলে রেখেছিলেন মেয়ে রিয়ামনিকে। এরপর ভালো ছেলে দেখে রিয়াকে বিয়ে দিয়ে সেই দায়িত্ব কিছুটা কমাতে চেয়েছিলেন তিনি।
মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব সম্পূর্ন করলেও মেয়ের সেই সুখের সংসার আর দেখে যেতে পারলেন না ফাহিমা।
আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার যে বাড়িতে ফাহিমা আক্তার ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিঁড়ে পড়ে নিহত পাঁচজনের একজন ফাহিমা আক্তার। এ ছাড়া আরো মারা যান রিয়ার শ্বশুর রুবেল (৬০), খালা ঝরনা (২৮), খালাতো বোন জান্নাত (৬) ও খালাতো ভাই জাকারিয়া (২)। তবে ফাহিমার মেয়ে রিয়ামনি ও তার স্বামী হৃদয় এ দুর্ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
নিহত ফাহিমা আক্তারের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার নওদত্ত গ্রামে। তার স্বামীর নাম আব্দুর রাজ্জাক। তবে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না বলে জানা যায়।
রিয়ামনি আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার রেডিয়ান্ট গার্মেন্টসে চাকরি করতেন আর তার মা ফাহিমা আক্তার চাকরি করতেন একই এলাকার সিআইপিএল গার্মেন্টসে।
ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, ‘৮ তলা এই বাড়ির ছয়তলার ৬০৪ নম্বর ইউনিটে বড় মেয়ে রিয়ামনি আর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ফাহিমা আক্তার। গত শনিবার এই বাড়ির ছাদেই অনুষ্ঠিত হয় রিয়ামনির বিয়ের ছোট্ট আয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রিয়ার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই তাদেরকে নানা রকম সহযোগিতা করেছি। এমনকি শনিবার আমি নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করি। গতকাল সকালে বউভাতে যাওয়ার উদ্দেশে মিষ্টি হাতে রিয়ামনির মা ও খালাসহ বাকিরা আমার সামনে দিয়েই বের হয়ে যান। বিকেলেই খবর পেলাম তাদের বহনকারী গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পাঁচজন মারা গেছেন। এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
এদিকে সংবাদ মাধ্যমকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার এসআই সুদীপ কুমার গোপ জানান, মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে আশুলিয়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ফাহিমা। দুর্ঘটনার পর বাসার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এই মুহুর্তে ঐ বাসায় কেউ নেই।