Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি একজন এসপি স্যার, উনাকে একটাই প্রশ্ন আমার আপরাধ কি ছিলো : দিবা

আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি একজন এসপি স্যার, উনাকে একটাই প্রশ্ন আমার আপরাধ কি ছিলো : দিবা

বাবার মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন আসপিয়া ইসলাম কাজল। আর এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি টুকিটাকি কাজও করতেন তিনি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল, ততই যেন পরিবার নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। আর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যেখন পুলিশ কনষ্টেবল পদে চাকরির সুযোগ আসলো, ঠিক তখনই এক জটিলতায় পড়তে হয় তাকে। জানতে পারেন, ‘ভূমিহীন’ হওয়ায় এ চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না তিনি।

সম্প্রতি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠে আসছে আরও অনেক আসপিয়ার গল্প।

জানা যায়, পরিবার নিয়ে সুন্দর ভাবেই দিন কাটছিলো দিবা রায়ের। কিন্তু মেঘনা নদীর থাবায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বাড়ি। হয়ে পড়েন ভূমিহীন। কিন্তু চরম কষ্টের মধ্যে পড়েলেখা চালিয়ে গেছেন শিক্ষার্থী দিবা রায়। স্বপ্ন ছিলো একটি সরকারি চাকরির। কিন্তু সেই চাকরি আর হলো না। ভূমিহীন হওয়ায় তার চাকরি হয়নি। অনেক দপ্তরে ঘুরলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি দিবা রায়ের।

চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী দিবা রায় (২১) কথা। তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আজিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিপ্লব রায় ও শিপ্রা দম্পতির বড় মেয়ে। দিবা রায় ও তার একমাত্র ছোট ভাই দেবু রায় দীপ্ত’র জন্ম ও বেড়ে ওঠা- সবকিছুই চট্টগ্রাম শহরের ২ নং গেইটস্থ নাসিরাবাদ এলাকায়। ২০ বছর আগে ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হলে শহরে চলে আসেন বিপ্লব রায় ও শিপ্রা দম্পতি।

অসুস্থ মা শিপ্রা রায় ও একটি ওষুধ কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করা বাবা বিপ্লব রায়ের আর্থিক টানাপোড়েন ঘোচাতে বড় সন্তান হিসেবে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন দিবা রায়। পড়াশোনা শেষ করে বড় সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এইচএসসি অধ্যয়নকালেই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন একটা ছোট্ট চাকরির। কিছুতেই যেন মিলছিল না চাকরি নামের সোনার হরিণ। এরই মধ্যে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বুকভরা আশা নিয়ে সেখানে আবেদন করেন দিবা রায়।

আবেদনের পর ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবল (নারী) পদে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন দিবা। পরদিন ২ জুলাই লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন তিনি। যথারীতি ৬ জুলাই মৌখিক পরীক্ষায়ও পাশ করেন। সর্বশেষ ১০ জুলাই মেডিকেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে ১৪ জুলাই প্রকাশিত মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টে ‘ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবল’ পদের জন্য যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়েছিলেন দিবা রায়।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে ‘ভূমিহীন’ বলে উল্লেখ থাকায় কনস্টেবল পদের জন্য অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয় দিবা রায়কে। পরে বাবা বিপ্লব রায়ের সন্দ্বীপ উপজেলাস্থ আদি বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সত্যতার স্বপক্ষে ১৩নং আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের দেখালেও কারও কানে যেনো ঢুকেনি।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে দিবা রায় বলেন, ২০১৯ সালে পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করি। আবেদনের পর সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু শেষে বলা হয় আমি (দিবা রায়) ভূমিহীন হওয়ায় আমার চাকরি হবে না। এরপর আমি সেসময়ের পুলিশ ডিআইজি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি স্যারের কাছে আবেদন করি। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। আমি দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আমার চাকরি হয়নি। আমি ভূমিহীন এটা আমার অপরাধ বললেন তিনি।

এর আগে গতকাল তিনি তার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, গতকাল শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সরকারি চাকরি করাটা সবার স্বপ্ন, সেটা হোক ছোট বা বড় যেকোনে পদে। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই ২০১৯ এর দিকে আমিও পুলিশের নিয়োগ পেয়ে ছুটে যাই। তারপর হাজার হাজার ছেলে, মেয়ের মাঝ থেকে আমিও সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে উত্তির্ন হই। কিন্তু শেষ দিন এসে, যেদিন ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয় যারা সফল ভাবে চাকরির জন্য উত্তির্ন হয় তাদের, সেদিনি এসে আমি জানতে পারি আমার নাম বাতিল করা হয়।

কারণ জানতে চাইলে আমাকে ভূমিহীন বলে অযোগ্য ঘোষণা করেন। খুব ভেঙে পড়েছিলাম, খুব কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিলো আমার স্বপ্ন যেনো এক নিমিষেই শেষ করে দিলো তারা, আমার চাকরি হওয়ার পর ও আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি একজন এসপি স্যার, উনাকে আমার একটাই প্রশ্ন আমার আপরাধ কি ছিলো?

অন্যজনের চাকরি হয়েছে আমার কেনো হয়নি, আমার একটাই ভূল ছিলো আমি সরলমনে কিছু বুঝতে না পেরে, আমি আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করিনি, আমাকে আমার আশেপাশে থাকা প্রশাসনিক কর্মীরা একটা বারও বলেনি যে কাগজে কলমে আমার কি লিখতে হবে, আমি তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে বলেন যেইখানে থাকেন সেটাই লিখে দিন হবে। তাই বলে আমার চাকরি কেড়ে নিবে আমার কাছ থেকে, আমি তবুও থেমে থাকেনি। আমাকে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী একজন স্যার সহযোগিতা করেছেন, আজ নাম বলবো না উনার, সময় হলে বলবো। আমি কি করিনি এই চাকরির জন্য?

ঢাকা হেডকোয়ার্টার আইজিপি স্যারের নিকটেও গেছিলাম,যখন আমাদের শ্রদ্ধেয় জাবেদ পাটোয়ারী স্যার আইজিপি পদে ছিলেন। চিঠি প্রেরণ করি, সেটা গ্রহণ ও হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেনো কোনো উত্তর আসেনি?কেনো অন্যদের চাকরি হচ্ছে, যাদের যোগ্যতা নেই তাদেরও হচ্ছে, আমার যোগ্যতাই আমি পেরেছি কিন্তু আমার কেনো হয়নি? কেনো তারা আমার সাথে অন্যায়টা করলো এটাই আমার প্রশ্ন? তারা আমার সাথে অন্যায় করেছে। যেইখানে আমি আমার সব ধরনের কাগজপত্র তাদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তাই এখন আমি লড়বো আমার অধিকার আদায়ের জন্য কারণ আমার যোগ্যতায় আমি উত্তীর্ন হয়েছি। আমি স্বচ্ছ নিয়োগ পেয়েছিলাম,তাহলে কেনো হয়নি আমার চাকরি? আমি এর প্রতিদান না পাওয়া পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকবো না। এতোটা দিন চুপ করে বসে ছিলাম, কবে এর উত্তর আসবে সেই আশায়। কিন্তু আর নয়, আমি এর জবাব চাই। আমার একটাই আবেদন, আমি আমার চাকরিটা ফিরে পেতে চাই।

এদিকে এবার দিবা রায়ের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক শোরগোন। এর প্রেক্ষিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, একজন বাংলাদেশের নাগরীক হওয়া সত্বেও ‘ভূমিহীন’ হওয়ায় তাকে চাকরি না দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। এর সঠিক বিচারের দাবিও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *