Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ‘আমার স্ত্রী তো আন্দোলনে যায়নি, তাকে কেন গুলি করে মারল

‘আমার স্ত্রী তো আন্দোলনে যায়নি, তাকে কেন গুলি করে মারল

আমার স্ত্রী ছিলেন একজন সাধারণ গার্মেন্টস কর্মী। তিনি আন্দোলনে যাননি। এটা তার দোষ ছিল না. পুলিশ তাকে গুলি করল কেন?’— গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত পোশাক শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুনের স্বামী জামাল বাদশা কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বুধবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্ট। সে শুধু কাঁদছিল আর হাহাকার করছিল।

কাঁদতে কাঁদতে জামাল বাদশা বলেন, ‘আমার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। আমি আলাদা পোশাকে কাজ করি। সরকার গতকাল বেতন বৃদ্ধি করলেও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। আজ সকালে আবারও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে গার্মেন্টস ছুটি ঘোষণা করে। আঞ্জুয়ারা গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে মোড়ের জারুন এলাকায় এলে পুলিশ গুলি চালায়।

তিনি বলেন, ‘বাড়ি ফেরার কোনো উপায় না পেয়ে সে এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। পরে পুলিশের বুলেট তার মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। সেখান থেকে আঞ্জুয়ারাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ন্যূনতম মজুরি বোর্ড অবাস্তব সুপারিশ করেছে
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর থানা এলাকায়। আমি আর আঞ্জুয়ারা এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় থাকি। আমি শেষ. আমার কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমার স্ত্রীকে ওরা গুলি করেছে, এর দায় কে নেবে? সরকারের কাছে আমার স্ত্রী হত্যার বিচার চাই।

গতকাল মজুরি বোর্ড ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে আজ (বুধবার) সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও জারুন এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস অ্যান্ড বেস্টল সোয়েটারসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।

পরে সকাল ৮টার দিকে কাশিমপুরের জারুন মোড়ের সামনে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে হাতে ইট ও লাঠি নিয়ে মিছিল করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন দেয়। এছাড়া শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেট হয়ে হাতিমারার দিকে অগ্রসর হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, শ্রমিকদের শান্ত থাকতে বলা হলেও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। আমরা তাদের বলেছি কারখানায় প্রবেশ করতে, প্রয়োজনে কাজ বন্ধ করতে এবং কারখানা ভাঙচুর না করতে। কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা না শুনে অন্য কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে নামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

About Zahid Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *