রাজনীতি, ধর্ম, অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে লেখালেখি করে থাকেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিস।তবে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।যদিও তাকে আগের মতো লেখালেখি করতে দেখা যায় না কিন্তু নানা বিষয়ে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব থাকেন তিনি।এবার ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ তুলে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপযুক্ত মানুষ নই আমি। আমি চালাক চতুর নই। বুদ্ধি যেটুকু আছে, সেটুকু অতি সাধারণ। আমি চোর ডাকাত বদমাশকে বিশ্বাস করে বসে থাকি। আজ সকালে এক হ্যাকার ফোন করে খুব মিষ্টি কণ্ঠে বললো সে বিদ্যুৎ অফিসের লোক, আমি কাল বিদ্যুৎবিল অনলাইনে মিটিয়েছি, টেকনিক্যাল কারণে সেটা জমা হয়নি, বরং বিল পেণ্ডিংই রয়ে গেছে। জমা হওয়ার জন্য আমাকে ডাউনলোড করতে হবে এনিডেস্ক অ্যাপ, তারপর যে ৯ ডিজিটের নম্বর আসবে, সেটি তাকে জানাতে হবে। এনিডেস্ক ডাউনলোড করলাম, ৯ ডিজিটের নম্বর এল, সেটি তাকে জানালাম। সে বলতে লাগলো আমার বিল খুব বেশি, এত বেশি বিল আমার পে করা উচিত হয়নি, এত বিল যেন না আসে সে তার ব্যবস্থা করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর সে আমাকে আলপেমিক্স রিমোট ডেস্কটপ কন্ট্রোলও ডাউনলোড করতে বললো। সেটাও করলাম। করার পর অ্যাপের ‘ডেস্কটপ কন্ট্রোল’ নামটি দেখে আমার সন্দেহ হলো, জিজ্ঞেস করলাম, আমার ডেস্কটপ কন্ট্রোল করতে চাইছেন কেন শুনি। তার উত্তর আসার আগে আমি ফোনের লাইন কেটে দিই। এ প্রথম নয়, এর আগে ইউরোপেও আমি অচেনা এক লোককে আমি ব্যাংকের কার্ড নাম্বার, পিন টিন সহ সব দিয়ে বসেছিলাম। একাউন্ট খালি করে নিয়ে গিয়েছিল ফরাসি হ্যাকার। বোকামোর আরও অসম্ভব অসম্ভব সব কাহিনী আছে আমার। যা ছিল, সব খুইয়েছি। সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর তো ওটিই, রাতের অন্ধকারে ডাক্তার নামের এক লোক এসে আমাকে একা পেয়ে ফাঁদে ফেলেছিল, আর আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম! আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই, পরিচিত কেউ আমাকে ভিজিট করতে আসার আগেই, শুধু কিছু টাকার জন্য, আমার শরীরের কাঠামোকেই কুড়োলের কোপ মেরে জন্মের মতো অকেজো করে দিল সে। হাবিজাবি লোককে বিশ্বাস করে করে নিঃস্ব হয়েছি সারাজীবন। সে কারণেই বলি, আমি যোগ্য নই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য। পৃথিবীটা আমার জন্য বড় কঠিন, বড় বান্ধবহীন।