প্রতিদিনের মত মা মেয়েকে নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত। কারন আজ তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা। প্রতিদিনের মত মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মেয়ের কাছ থেকে তার ব্যবহারকৃত ফোনটি নিয়ে নেয় মা। কারণ পরীক্ষার হলে ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। মেয়ে মাকে পরিক্ষার হলের বাহিরে রেখে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে। সকল শিক্ষার্থীর পরিক্ষা শেষ হয়ে যায় তবে তার মেয়ের পরিক্ষা শেষ হয় না। ঘন্টর পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও সে বাহিরে আসে না।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে নিখোঁজ হওয়া যশা মৃধা সুকন্যার পরিবার তাকে জীবিত ফিরে পেতে চায়। নিখোঁজ ইয়াশার মা নাজমা ইসলাম লাকী মামলার তদন্তে অগ্রগতি না দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। ন্যায়বিচার না পেলেও তিনি শুধু চান তার মেয়ে জীবিত ফিরে আসুক।
শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ইয়াশার মা নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমি আমার মেয়েকে খুঁজে পেতে চাই। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার মেয়ের মানসিক সমস্যা আছে। আবার ফোনে মেসেজ আসে যে আমার মেয়েকে মিরপুর ১ বা মিরপুর ১০ বা মিরপুর ১৪ এ দেখা হয়েছে নাকি। আমরা সেখানে এটি খুঁজে পাই না. প্রশ্নবিদ্ধ থানা আরও বলছে, এমন মেয়েকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, আমি শুধু চাই আমার মেয়ে জীবিত ফিরে আসুক। আমি কোনো বিচার চাই না, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই না। আমাার মেয়ের কোন মানুষিক সমস্যা নেই, দয়া করে একটু বুঝার চেষ্টা করুন।
নাজমা ইসলাম লাকী পূর্বে লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন: “আমার স্বামী জুনায়েদ জাহাঙ্গীর, লন্ডনের বাসিন্দা। আমি আমার স্বামীর পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। আমাদের একমাত্র মেয়ে যশা মৃধা সুকন্যা সিদ্ধেশ্বরীর এইচএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই বছর গার্লস কলেজ। গত ২৩ জুন আমি আমার মেয়েকে কলেজে নিয়ে যাই মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য। মেয়েটি কলেজে প্রবেশ করে দুপুর সাড়ে ১২টায়। বরাবরের মতো আমি কলেজের বাইরে প্যারেন্ট লাউঞ্জে অপেক্ষা করি। পরীক্ষা হওয়ার কথা বিকাল ৩ টায় শেষ হলে সকল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের হলে আমার মেয়ে বের হয়নি আমি আমার মেয়ের বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে কিছুই বলতে পারেনি, তাই আমি বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে জানায় যে আমার মেয়ে সেদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।অনেক খোঁজাখুঁজির পরও মেয়েকে পেলাম না।মেয়ে তার মোবাইল ফোন দিয়ে পরীক্ষা দিতে গেল।
তিনি বলেন, সুকন্যাকে না পেয়ে আমি তার ফোন চেক করতে থাকি। সেখান থেকে ইশতিয়াক নামের এক ছেলের সাথে কথোপকথন দেখলাম। পরে রমনা মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায় এবং মামলা দায়ের করে।
পুলিশ তদন্তে সহযোগিতা করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, পুলিশ মাত্র পাঁচ দিন আমাদের স্টেশনে রেখেছে। ও বলল, আপনি তদন্ত করতে গিয়ে বসে আছেন। ইশতিয়াক কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত ৭ জুলাই তার বন্ধু সালমান জামিন পান।
সংবাদ সম্মেলনে ইয়াশার মামা দিদারুল ইসলাম, চাচা, শিক্ষক ও বান্ধবীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনেকে ধারনা করছে তার মেয়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে। তবে সে এই ঘটনা মানতে নারাজ । সে বলছে আমার মেয়ে কখনো এমন কাজ করতে পারেনা। আমার মেয়েকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে। আমার মেয়ে কেমন আছে? কোথায় আছে? এই বলে অঝরে কাঁধতে থাকে নিখোজ হওয়া ওই তরুণীর মা।