আমার উৎপল গেল কৈ, ওরে উৎপল, তুই কনে গেলি, আমার বুকের ধনরে ছাড়া আমি বাঁচমু না। তুমি আমার বাটক অইন্যা দাও। এমনটাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন প্রয়াত উৎপলের মা। উৎপলের এমন অকাল প্রয়ানের ঘটনা তার পরিবারসহ সকল স্বজনেরা কিছুতেই মেনে নিতে পা। সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
শিক্ষার্থীর প্রহারে প্রয়াত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর শশ্মানে তার শেষকৃত্য হয়। উৎপলের স্বজন ও গ্রামবাসী চোখের জ্বলে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। সোমবার রাত ১০টার দিকে উৎপলের নিথরদেহ তার এলংজানি গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বৃদ্ধা মা গীতা রানীসহ পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। গভীর রাতে লাহিড়ী মোহনপুর শশ্মানে স্থানীয় বহু মানুষ তার দাহ কাজে অংশ নেন। এসময় অনেককে চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়। শোকের মাতম চলছে উৎপলের পরিবারে। ভারি হয়ে গেছে পরিবেশ। উৎপলের মা নির্বাক হয়ে পড়েছেন। মাঝে মাঝে অস্ফুট কণ্ঠে শুধু বলছেন, তোমরা আমার উৎপলরে আইনা দাও। এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না। দুইদিন ধরে কিছুই মুখে তোলেননি তিনি। শুধু মা গীতা রানী নন, এমন করুণ অবস্থা ওই পরিবারের সবারই।
উৎপলের স্ত্রী বিউটি সরকার, ভাই অসীম কুমার সরকার, তার স্ত্রী মলি রানী সরকার, ভাগ্নি দীপাসহ পরিবারের সবারই একই কথা, শিক্ষার্থীরা যদি এমন নিমর্মভাবে শিক্ষককে প্রাণনাশ করেন, তাহলে দেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের কী হবে? কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শৃঙ্খলা থাকবে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চিরায়ত মধুর সম্পর্ক একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। উৎপলের পরিবারের স্বজনরা অবিলম্বে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম জিতু ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। উৎপল উল্লাপাড়ার এলংজানী গ্রামের প্রয়াত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের শাসন ও বিচার করতেন। গত শনিবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ফুটবল খেলা হচ্ছিল। তখন মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন উৎপল। এসময় স্কুলটির দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে উৎপলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সোমবার সকালে তার প্রয়ান হয়।
উল্লেখ্য, হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান জানান, দুপুরে মেয়েদের খেলা চলাকালে শিক্ষক উৎপল সরকার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে অনেকেই তাকে জানিয়েছেন। এ সময় দশম শ্রেণির ওই ছাত্র তাকে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে বেদম প্রহার শুরু করে। উৎপল সরকার শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান থাকায় তিনি শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যার কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেন। ঠিক কী কারণে ওই ছাত্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো কেউ বলতে পারছেন না।