Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Entertainment / আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায়, পা থাকত না বা আমি কখনও মা হতে পারতাম না: দুর্ঘটনার বর্ণনায় ফারিণ

আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায়, পা থাকত না বা আমি কখনও মা হতে পারতাম না: দুর্ঘটনার বর্ণনায় ফারিণ

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। শুধু ছোটপর্দায় নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে তার। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তেমন বেশি সক্রিয় না থাকলেও হঠাৎ করে তার একটি পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনায়। গত শুক্রবার অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে একটি দুর্ঘটনায় পতিত হন, যেটা নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন। জানা যায়, যমুনা ফিউচার পার্কের চলন্ত সিঁড়িতে দুর্ঘটনায় আহত হন ফারিন। এ ঘটনার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা শেষে বাসায় বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দুর্ঘটনা বড় ধরনের না হলেও দুর্ঘটনার ঘোর থেকে মুক্ত হতে পারছেন না তিনি।

ফারিনের কথায়, দুর্ঘটনার সময় বাবা-ভাই সঙ্গে না থাকলে সে হয়তো বাঁচতে পারতো না। এবং এমনকি যদি সে বেঁচেও থাকতো তবে তার পা থাকতো না বা জীবনে কখনও মাতৃত্বের স্বাদও পেতেন না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাসনিয়া ফারিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিউচার পার্ক দুর্ঘটনার একটি রোমহ”র্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের পার্কের ফার্স্ট ফ্লোর থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার সময় গেট দিয়ে ঢুকেই যে মেইন এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি), সেটাতেই আমার দুর্ঘটনা ঘটে। আমি জানি না সিঁড়ির নিচে এটা অ্যালুমিনিয়াম নাকি স্টিলের, সেই পাত খুলে বের হয়ে ধারালো কোনা আমার পায়ে আঘাত করে। আমি সিঁড়ির ডান দিকে ছিলাম। এবং সেটি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। আমার পরনের প্যান্ট অনেকটা ছিঁড়ে গেছে এবং পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায় ও ডিপ কাট হয়, যা পরে বুঝতে পেরেছি।

কিন্তু সেই মুহূর্তটার একটাই ছবি বারবার আমার মাথায় বারবার ফিরে আসে যে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই জোরে চিৎকার করে উঠলো আর দেখলাম ডান পা স্ক্র্যাচ করে পায়ের পাশ দিয়ে মাঝখান হয়ে বাম পায়ের উপরের দিকে একটা পাত ঢুকে যাচ্ছে আর চলন্ত সিঁড়িটিও আমাকে আরও সেদিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।

আমার ভাই যদি গতকাল এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে আমাকে পেছন থেকে টেনে না আনতেন বা আমার বাবা আমাদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিতেন, আমি জানি না আমি আজ এই স্ট্যাটাস লিখতে বেঁচে থাকতাম কিনা। হয়তো থাকতাম, কিন্তু আমার পা থাকতো না বা আমি কখনো মা হতে পারতাম না। সেই পরিস্থিতির ভ”য়াবহতা হয়তো কথায় বা লেখায় বোঝানো সম্ভব নয়। আমি নিচে নেমে দাঁড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের কিছুই আমার মনে নেই। সম্বিত ফিরে আসার পর দেখতে পাই আমার প্যান্ট হাঁটুর উপর থেকে ছিঁড়ে গেছে এবং আমার পুরো পা জ্বলছে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।

মজার ব্যাপার হলো, এই ঘটনাকে আমি দুর্ঘটনা বলে মানতে চাই না। কারণ আমার সাথে এই ঘটনার অন্তত পনের মিনিট আগে অন্য একজনের সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল। তার পায়ের মাংস ভেদ করে ঐ পাতের কোনা ঢুকে যায়। তিনি নিজেও নাকি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে সতর্ক করেছিলেন এবং দায়িত্ববান কাউকে খুঁজছিলেন। শেষে কাউকে না পেয়ে হেল্প ডেস্কে গিয়ে জানিয়েছিলেন এবং এরই মধ্যে আমার সাথে এই ঘটনা ঘটে। আরও একজন এই ধরনের দুর্ঘটনার শি”কার হয়েছিলেন।

আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে অবশেষে একজন স্টাফ আসে এবং বেশ কয়েকবার বলার পর ম্যানেজারকে কল করে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে যাচ্ছে এবং যন্ত্রণার চেয়ে অপমানই বেশি অনুভূত হচ্ছিলো। সেখানে কিছু সিন ক্রিয়েট করার পরিবর্তে, আমি অনুভব করেছি যে এটি ঠান্ডা মাথায় সমাধান করা দরকার। তাই আমি বলার পর দুই কর্মচারী আমাদের তিনজন আহত ব্যক্তিকে এবং তাদের সাথে সবাইকে বেসমেন্ট ১ এ নিয়ে যায়। আমরা ভেবেছিলাম দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় মলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা ফার্স্ট রেসপন্ডার নেই!

পনেরো-বিশ মিনিট ধরে ওরা শুধু এই ফার্মেসিকে ওই ফার্মেসিকে কল করেছিল। কেউ দোকান ছেড়ে আসবে না বলে জানাচ্ছিল। অবশেষে আধাঘণ্টা পর কেউ এসে দুজনকে চিকিৎসা দেয়। কিন্তু মহিলা ডাক্তার ছাড়া আমার চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। এদিকে আমি আমার ভাইকে একটা ট্রাউজার কিনতে পাঠালাম।

যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, অনেকে ওঠার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে! তার মানে কি আপনারা বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন? নাকি ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে আগে থেকেই এই অবস্থায় ছিল তা আপনারা টেরই পাননি? অন্য একজনের সাথে এমন ঘটনা ঘটার পরও আপনি কেন কোন ব্যবস্থা নিলেন না? এসকেলেটরের দায়িত্বে থাকা কাউকে ফোন করতে বলা হলে তিনি আসেননি। আর আমার এই পরিস্থিতিতে তারা আমাকে চা কফি অফার করে, যেখানে আমার বসার মত পরিস্থিতি নেই।

যাই হোক, আমরা কাপড় পাল্টে আমাদের গাড়িতে করে এভারকেয়ার ইমার্জেন্সিতে গেলাম। ড্রেসিং, সেলাই, এক্স-রে, ইনজেকশনের পর আমাকে রাত ১২ টায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের একজন কর্মকর্তা হাসপাতালে আসেন, আমরা বলার কারণে। বিলের প্রসঙ্গ উঠতেই বলে, ‘আমি কেন দিব?’ আপনার দু-চার টাকা আমার লাগবে না, কিন্তু মানবতাও তো দেখি নাই? যেখানে আপনি নিজেই দোষ স্বীকার করেছেন এবং আমি আপনার কাছে কোন ক্ষতিপূরণও চাইনি। একটা সামান্য ইমার্জেন্সির বিল দেওয়ার মানসিকতা আপনাদের নেই? তাদের মতে, এটার বিচার হচ্ছে। তারা অভ্যন্তরীনভাবে সুষ্ঠ (!) তদন্ত করবেন।

আজ আমার জীবন হোক বা অন্য কারো জীবন হোক, তাদের কোনো পরোয়াই নেই। সারারাত আমার ঘুম হয়নি। মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। আমার ভাই আজ যদি আমার পিছনে না থাকত বা আমাকে ধরতে একটু দেরি করত তাহলে কি হত তা আমি ভাবতেও চাই না। আল্লাহ যেন কাউকে জীবনে এমন পরিস্থিতিতে না ফেলেন। আপনি যে লিফট বা এসকেলেটরই ব্যবহার করুন না কেন, নিজের সতর্কতা অবলম্বন করুন।

আমি শারীরিকভাবে ফিট। ডাক্তার পাঁচদিন বেড রেস্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন। বোন আহত হয়নি। আমি ভালোভাবে বসতে পারছি না আর আমাকে একদিকে কাত হয়ে ঘুমোতে হচ্ছে। সেইসাথে বাঁ দিকে কাত হতে পারছি না। কিন্তু এটা আমি বুঝতে পারছি না যে আমার মানসিক ট্রমা আদৌ কখনো শেষ হবে কিনা। আর আমার ভিতরে সবচেয়ে যে অনুভূতিটা কাজ করছে আর সেটা হল হতাশা। মানুষ যদি না ফেরার দেশে চলে যায়, তাহলে সে কোনো বিচার পায় না। কিন্তু আমি তো বেঁচে আছি, তবে আমি কি এই ঘটনার বিচার আদৌ পাব না?

 

About bisso Jit

Check Also

গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি, জানা গেল কনের পরিচয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যখন সারা দেশের মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন বেশ নিরব ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *