বাংলাদেশ ২০১৭ সালে সারা বিশ্বকে অবাক করিয়ে দিয়ে ঘটিয়ে ফেলে একটি দুঃসাহসিক ঘটনা। অর্থনীতির দিক থেকে ছোট বাংলাদেশ সেইদিন জায়গা দেয় মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হওয়া লাখ রো’হি’ঙ্গা’কে’ জায়গা দেয় বাংলাদেশে। তবে সেই বিষয়টি এবার বড় একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের বাস্তবতা বোঝা উচিত যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রো’হি’ঙ্গা’রা’ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে।
মঙ্গলবার প্রচারিত ওয়াশিংটনে ভয়েস অফ আমেরিকার (ভোয়া) বাংলা সার্ভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তাদের (রো’হি’ঙ্গা’দে’র’) দেশে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকেরই পরিস্থিতি বোঝা উচিত। আমাদের পক্ষে আর কোনো লোক নেওয়া সম্ভব নয়, রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে হবে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বারবার আবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত বিশাল জনসংখ্যার (প্রায় দেড় লাখ রো’হি’ঙ্গা’) দায়িত্ব নেওয়া একক দেশের পক্ষে অসম্ভব। শুধু আশ্রয়ই নয়, এত বিশাল জনসংখ্যার জন্য জীবিকা নির্বাহ করাও একটি বিশাল দায়িত্ব, যা কোনো দেশ একা বহন করতে পারে না।
তিনি উল্লেখ করেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং চলমান কোভিড-১৯ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা বিশ্ববাসীকে চরম সংকটে ফেলেছে।
তিনি বলেন, যারা (স্থানীয় লোকজন) সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল (রোহিঙ্গারা) তারা এখন নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ রোহি’ঙ্গা’দে’র জন্য আর কত কিছু করতে পারে, কারণ দেশটির বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং দেশটির জনগণের কথাও ভাবতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের এখন ঘিঞ্জি বস্তিতে (রো’হি’ঙ্গা’ ক্যাম্প) লালন-পালন করা হচ্ছে, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ খুবই সীমিত।
বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আর কোনো লোক নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রো’হি’ঙ্গা’দে’র’ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রো’হি’ঙ্গা’দে’র’ দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান কক্সবাজারের বন উজাড় করে দিয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্টের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এবং এলাকার আবাদি জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেক রো’হি’ঙ্গা’ মানব পাচারের পাশাপাশি ”মা’দ’ক’ ও অ’স্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সংঘাতে জড়িত ছিল।
এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সময় আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে হ’ত্যা’-ধ’র্ষ’ণ’স’হ’ অমানবিক নি’র্যা’ত’নে’র’ মধ্য দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাই আজ যখন তারা (বাস্তুচ্যুত রো’হি’ঙ্গা’রা’) একই ধরনের নি’র্যা’ত’নে’র’ শিকার, তখন বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের আশ্রয় দেয়।
তিনি বলেন, সেই দুর্ভোগ আমরা নিজ চোখে দেখেছি (১৯৭১ সালে)।
এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ১৬ কোটি বাংলাদেশিসহ লাখ লাখ মানুষের (‘রো’হি’ঙ্গা’) দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তার ছোট বোন শেখ রেহানার অনুরোধের কথাও স্মরণ করেন।
শেখ রেহানার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আপনি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারেন, কিন্তু কয়েক লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারেন না?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিবাচক জবাবে বাংলাদেশিরা একবেলা খাবেন এবং প্রয়োজনে রো’হি’ঙ্গা’দে’র’ সঙ্গে অন্য খাবার ভাগ করে নেবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি জনগণ, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেক খাবার নিয়ে ‘রো’হি’ঙ্গা”দের’ ‘পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরবর্তীতে এগিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের সহায়তা শুরু করেছে।
ভারত সফর শেষ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এ সফরে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়াসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।জানা গেছে সব অণুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফায়ার আসবেন বাংলাদেশে।