বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাজনৈতিক নেতাদের অতীত নিয়ে কথা না বলে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অনেকেই অতীত নিয়ে আলোচনা করেন। অতীতের বদলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা খুবই জরুরি। আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কী ধরনের নীতিমালা করা যায়, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ক/রতে হবে।
বুধবার বনানীর হোটেল শেরাটনে ইউএসএআইডি আয়োজিত ‘তারুণ্যের কথা, নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় যুব সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
পিটার হাস বলেন, “আমি এখানে এসে জানতে পেরেছি যে রাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহ ক্রমশ কমছে। ক্যাম্পাসে স/হিংসতা, যুব নি/র্যাতন এবং দু/র্নীতি তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার সংস্কৃতি তৈরি করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। .
তারা এলে দেশ বদলে যাবে।
মিথ্যা তথ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট ছিল না। কিন্তু এখানে আমি আমার নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট পেয়েছি। সেখানে আমি এমন জায়গার ছবি দেখেছি যেখানে আমি কখনও যাইনি।
আমার নামে এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা আমি বলিনি। এটা শুধু আমার নয়, অনেকের সাথেই ঘটছে। এসব মিথ্যা তথ্য দেওয়া বন্ধে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত তরুণদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। তিনি স/হিংসতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নারী ও তরুণরা রাজনীতিতে পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণই নির্বাচনে সফলতা আনতে পারে। সেখানে তরুণদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও তাদের দাবি বাস্তবায়নে আরও বেশি অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, তরুণদের জোর করে কোনো বিষয়ে সম্পৃক্ত করা যাবে না। তারা যা খুশি তাই করবে। দেশে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকরা কঠোর পরিশ্রম করে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় একটি পর্যায়ে গিয়ে দক্ষতা অর্জন তারা কাঙ্খিত অর্জন করতে পারছে না।।এসব কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চাকরি নিশ্চিত করতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন।এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। .
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের হার ৩০ শতাংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সক্রিয় থাকায় তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। ৫০ বছর আগে পর্যাপ্ত হাতিয়ার ছাড়াই আমাদের তরুণরা দেশকে স্বাধীন করেছে।আজকের তরুণরা কি সেই স্বাধীনতা পায়?আজকে গণতন্ত্র না থাকায় তরুণরা রাজনীতিতে আসতে অনিরাপদ বোধ করে।তাদের প্রশ্ন এখন রাজনীতিবিদদের মানুষ কী দেখে?শিক্ষার্থীরা কেন মা/র খাচ্ছে? কোটা পরিবর্তন?কেন পোস্টেকে ঘিরে বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী মা/রা গেল?আইনের দ্বিমুখী আচরণে তারাও ভীত।আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যত ভয় দেখাবেন, তরুণরা ততই জাগ্রত হবে। “আমাদের যুবসমাজ চুপ করে থাকবে না, এই শাসন বদলাতে হবে। তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পাঁচটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে তরুণদের সামাজিক দক্ষতার উন্নতি, আচরণগত উন্নতি, যোগ্যতা তৈরি ও প্রতিষ্ঠা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে শিক্ষা, রাজনীতি ও নাগরিক সেবার মান বাড়াতে হবে। তারুণ্যই দেশের ভবিষ্যৎ, বর্তমান সম্পদ। দেশ ও সমাজ পরিবর্তনে তাদের গুরুত্ব অপরিসীম।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সেমিনারে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে দেশের রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ইভেন্টের মাধ্যমে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এসব বিষয় নিয়ে বছরব্যাপী প্রচারণার উদ্বোধন করে।
সমাপনী বক্তব্যে, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সমন্বয়ক ডানা এল ওল্ডস বলেন, দেশের বিষয় নিয়ে কথা বলতে সাধারণ নাগরিকরা প্রায়ই পিছিয়ে থাকে। তারা জানে তাদের কথার রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ব নেই। অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনায় নাগরিকদের বিষয়বস্তু বাদ পড়ে যায়। প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনায় নাগরিকদের ইনপুট অন্তর্ভুক্ত করার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা। রাজনৈতিক নেতাদের বিজয় জনগণের বিজয় হওয়া উচিত।
প্রাসঙ্গিক