বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যার নেতৃত্বে অগুনিত জয় ছিনিয়ে এনেছে টাইগাররা। তবে শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবেই নয় অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার আরেক নাম মাশরাফি। ক্যারিয়ারে একাধিকবার ইনজুরিকে থেকে ফিরে এসেছেন গুণী এই তারকা। যাকে ভুলে যাওয়া ক্রিকেট প্রেমি ভক্তদের জন্য কখনই সম্ভব নয়।
এখন তিনি সংসদ সদস্য। সম্প্রতি মাশরাফি এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ লিভারেল আর্টসের (ইউল্যাব) সমাবর্তনে। সেখানে তিনি শুনিয়েছেন নিজের ফিরে আসার গল্প, দিয়েছেন অনুপ্রেরণা। মেহনত করার বার্তাও দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত এই মানুষটি।
তিনি কী বলেছেন…
আমি আমার জীবনের দুটি বিষয় হয়তো বলতে পারি। আমি খুব ছোট জেলা থেকে এসেছি। যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আমি অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১০ ১৯ ও ‘এ’ দল হয়ে জাতীয় দলের হয়ে এসেছি। আমরা নড়াইলে যখন ছিলাম, ওই ফ্যাসিলিটিজ ছিল না। এত বেশি কোচ ছিল না, ফিটনেস ট্রেনার ছিল না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে আমি খুব উপভোগ করেছি। আমি খুব অল্প বয়সে বুঝতে পেরেছিলাম, ক্রিকেটটা পছন্দ করি, খেলতে চাই।
জীবনের কঠিন সময় যখন এলো, আমার ইনজুরি। যখন অপারেশন হলো। ২০০১ সালে ভারতে গেলাম। তখন ৪টা টেস্ট খেলেছি, তিনটি ওয়ানডে খেলেছি। হসমত হসপাতাল নাম, ডাক্তার থমাস চেন্ডি। আমি পায়ে ব্যথা পেলাম, উনি বলল দেখে দিচ্ছি। পরে এমআরআই করালো। পরের দিন সকালে বলল যে তোমার লিগামেন্ট টোন হয়েছে। তোমার অপারেশন করাতে হবে এবং এক বছর খেলার বাইরে থাকতে হবে।
আমি একা গিয়েছিলাম। ঢাকায়ই কম এসেছি, সেখানে ভারতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল আকাশটা আমার মাথায় ভেঙে পড়েছে। এরপর ওখান থেকে ফিরে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভালোভাবে খেলেছি। পরের তিন বছরে আবার চারটা ইনজুরি। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৪৪ থেকে ১২০ কিলোমিটারে বল করা। ওটাকে ম্যানেজ করা, সাতটা অপারেশন করা।
তবে সবকিছুর পরও আমি যখন মাঠে নামতাম, বুঝতাম কী করি। আমি বাংলাদেশের জন্য খেলছি, এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিল না। তখন আমি আসলে…আমি জানি ওই দিনগুলো কেমন গেছে। স্পোর্টসে সার্জারির চেয়েও রিহ্যাবিশন প্রক্রিয়াটা কঠিন। আমি বিশ্বাস করি আমার চাওয়া, ডেডিকেশন, স্পোর্টস নিয়ে ফোকাস আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেটার কারণে ২০১৫ সালে এসে অধিনায়কত্ব পেয়েছি।
আমি এটাই বুঝাতে চাচ্ছি ২০ বছরের ক্যারিয়ারে আরও অনেক বেশি কিছু করতে পারতাম হয়তো। আমি সুস্থ থাকলে তিনশ উইকেট পেতাম টেস্টে, ওয়ানডেতে আরও বেশি পেতাম। কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নাই। কারণ আমি জানি চেষ্টা করেছি। এজন্য খারাপ লাগে না। আল্লাহ সবাইকে সুযোগ দেয়, এগুলো নেওয়া খুব জরুরি।
তবে বর্তমানে ২২ গজের উইকেটে ব্যাট-বলের লড়াই থেকে অনেকটা দুরে থাকলেও নিজের দায়িত্ব থেকে সড়ে যাননি সাবেক এই অধিনায়ক। বিশ্বাকাপ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একের পর এক হারের পরও টাইগারদের উৎসাহ দিয়ে গেছেন তিনি।