Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আমার এটাই বড় অপরাধ যে আমি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা

আমার এটাই বড় অপরাধ যে আমি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা

৩৭ বছর পার হয়ে গেছে বাবা আর আমাদের মাঝে নেই। বাবা সে সময় চিরবিদায় নেন, সেই সময় আমি অনেক ছোট। শুধু আমি নয় আমার সাথে আমার ছোট ছোট ভাই বোন যারা, তারাও বাবার স্নেহ আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের তো কোন অপরাধ ছিল না। যার জন্য আমাদের প্রিয় বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। আমার বাবা কারাগারে বেশ নিরাপদে ছিল কিন্তু তার কি অপরাধ ছিল যে তাকে প্রাণ হারাতে হলো? তিনি কারাগারে থাকলেও তাকে গভীর রাতে নির্ম”মভাবে হ”/ত্যা করা হয়েছিল।

আব্বার অপরাধ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন।

তাঁর অপরাধ ছিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর অপরাধ তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর অপরাধ বারবার আহবান সত্ত্বেও তিনি খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলাননি। বঙ্গবন্ধুর র’ক্তে আনুগত্য করে পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারে যোগ দেননি তিনি। মোশতাক অনেক চেষ্টা করে, বাবাকে ফোন করে ভয় দেখায়। জবাবে আব্বা তার ঘৃণ্য কাজের তীব্র প্রতিবাদ করেন।

তখন বেহায়া মুশতাক তার বাবাকে বোঝাতে আম্মার সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আমার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম অটল ছিলেন। সামান্য ক্ষমতার লোভে তিনি কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর খু”নি দলের সঙ্গে হাত মেলাননি। বিনিময়ে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। এক ভয়ংকর মৃ”/ত্যু মেনে নিতে হয়েছে। খু”নিদের সাথে হাত না মেলার পরিণতি আব্বা জানতেন, কিন্তু তিনি তার প্রিয় নেতার রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাবার বন্ধুত্ব প্রায় তিন দশকের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রাক্কালে সিলেট থেকে পরিচিতি। তারপর বাংলার নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা একসঙ্গে হেঁটেছেন। পাকিস্তানি জান্তা সরকারের রক্তচক্ষুকে ভয় না পেয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যু”দ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা আব্বাকে ‘সংকট-মানব’ বলে উল্লেখ করেছে। ‘সঙ্কট-মানব সৈয়দ নজরুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাঙালির কাছে একজন সংকট-পুরুষ হিসেবে পরিচিত। বস্তুত আওয়ামী লীগ ও বাঙালি যখনই সংকটে পড়েছে, তখনই পথ দেখানোর দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত হয়েছে। সরল ও নীতিবান এই মানুষটি কথার চেয়ে কাজ করেন বেশি—চিন্তা করেন আরো বেশি। ’

আমরা সেই বাবাকে হারিয়েছি। প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে অনিশ্চয়তায়। রাতের পর রাত কেটে গেছে ঘুম ছাড়াই। আমার সহজ সরল মায়ের ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে। চোখের পলকে বদলে যায় পরিচিত মানুষগুলো। এই দিনেও সাহায্য পাওয়ার আশায় কত মানুষ আব্বাকে ঘিরে ধরতো। মুহূর্তের মধ্যে সব বদলে গেল। মিন্টো রোডে গভর্নমেন্ট হাউস ছাড়তে হলো। থাকার জন্য একটি নিরাপদ জায়গা পাওয়া আমাদের জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে। একটি সুখী-সৌভাগ্যবান পরিবার মুহূর্তের মধ্যে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। আমাদের স্বপ্ন কাঁচের মত ভেঙ্গে গেল। আমাদের শিক্ষাসহ সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

এমতাবস্থায় আম্মা সৈয়দা নাফিজা ইসলাম তার সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার ভাঙ্গা মন শক্ত করার চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আব্বা যখন মুক্তিযুদ্ধের সরকার পরিচালনা করছিলেন, তখন পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত প্রাণনাশের হুমকিতে আমরা দেশে-দেশে স”/ন্ত্রাসের দিন-রাত পার করছিলাম। আম্মা তখন পরম মমতা ও যত্নের সাথে আমাদের দেখাশোনা করেন। একাত্তরের সেই সাহসী রূপ আম্মার মুখে ছিল। গ্রামের প্রধান মহিলা সেদিন লাগাম না নিলে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম।

ধীরে ধীরে আমরা বড় হয়েছি। বড় দুই ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মঞ্জুরুল ইসলাম বিদেশে আছেন। সাফায়েতুল ইসলাম ভাই দেশে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম, আমি রুপা পড়ছি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলাম। আমার পড়াশুনা শেষ করার পর আমি যেখানেই চাকরির জন্য আবেদন করেছি সেখানেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। সিভি দেখে যখনই তারা নিশ্চিত করেছে যে আমি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে, তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমার অপরাধ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে। এটা ছিল ১৯৯১-৯২। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায়।

আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশকে একটি সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেই সময় মাঝে মাঝেই একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছ, আর সেটা হল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সবসময় দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে এবং তারা বেশ সক্রিয়। আমাদের সকলে মিলে সেই সব বিশ্বাসঘা”/তকদের প্রতিহত করতে হবে। আজকের এই শোকের দিনে আমি সবাইকে দৃঢ় শপথ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সোনার বাংলা সবার, এই সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব’ সবাইকে নিতে হবে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *