বিএনপির সাংসদ এবং দলটির বর্তমান সময়কার সরব নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ” গনতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আজ দেশে যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা থাকতো, যদি এ দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতো, তাহলে দেশনেত্রীকে আরো অনেক আগেই জামিন দেওয়া হতো।” আজ রবিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে তার বক্তব্যে এমন কথা বলেন।
এ সময় এমপি রুমিন ফারহানা যোগ করে বলেন, দুদকের মামলায় সাজা ১০ বছর—এটি একটি বিচারাধীন আপিলের সাজা। আমরা যখন জুনিয়র ছিলাম তখন থেকেই এটা করে আসছি। এটি একটি নতুন উদাহরণ হিসেবে দিচ্ছি না। আইনের চোখে সবাই সমান এটা কী এখন আছে, মনে হয় না। আইনের চোখে যদি সকলেই সমান হতো তাহলে দেশের ১৭ কোটি নাগরিক এ ধরনের যে মামলাগুলো সেগুলোতে জামিন পেতেন, দেশনেত্রীও পেতেন। কিন্তু এই সরকারের আমলে আইনের চোখে সবাই সমান এই যে নীতিকথাটি সেটা আর এই শাসনে নেই। খালেদা জিয়ার আজকের শারীরিক অবস্থার সম্পূর্ণ দায় এই সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, খালেদা জিয়া গত তিন বছর ধরে এই সরকারের হেফাজতে রয়েছেন। তিনি জেলে ছিলেন, বিএসএমএমইউতে ছিলেন। তিনি এখনও সরকারের হেফাজতে রয়েছেন।
এ সময় আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রুমিন ফারহানা বলেন, “আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি বলিনি ৪০১ ধারায় উনি বিদেশে যেতে পারবেন না। যেটা আমি বলেছি, নতুন করে আবেদন করতে হবে, জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। তারপরে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।’ ৪০১ ধারায় কোথাও বলা নাই—সা’জাপ্রাপ্ত বা দ’ণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কারা’গারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। বরং ৪০১ ধারা সরকারকে অবারিত ক্ষমতা দেয়, যেকোনো শর্তে—পুরোনো শর্তে, নতুন শর্তে সংযুক্ত করে সাজাপ্রাপ্ত বা দ’ণ্ডপ্রাপ্ত তার সাজার মেয়াদ স্থগিত করতে বা পুরোপুরি মুক্ত করতে।’
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আরও বলেন, ‘৪০১ ধারা নিয়ে বহু বিভ্রান্তি। আমি যখন প্রথম দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৪০১-এর ব্যাখ্যা দিলাম। আইনমন্ত্রী বললেন, উনাকে নতুন আবেদন করতে হবে। পরে ১৮ নভেম্বর যখন আমাদের আরেকজন সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ সাহেব আবার ৪০১ নিয়ে বক্তব্য দিলেন, তখন আমাদের মাননীয় আইনমন্ত্রী বললেন, ‘এটা আইনের বইয়ের কোথাও নেই। উনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে আমি এটা বিবেচনা করতে পারি। উনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনারও প্রশ্ন আসে না। উনারা আমাকে যত খুশি গা’লি দিতে পারেন, তাতে আমার কোনো যায় আসে না। আমি আইন মোতাবেক চলব।”’
বিএনপিদলীয় এ সাংসদ আরও বলেন, ‘বারবারই আইনমন্ত্রী বলছেন, একটা অ্যাপ্লিকেশন—যেটা ডিসপোজ অফ হয়ে গেছে, সেটার ওপরে আর আলোচনা চলবে না। এটা আমিও মানি। এটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু আরও দুটো অ্যাপ্লিকেশন তো দেওয়া আছে। উনার পরিবারের তরফ থেকে আবেদন করা হয়েছে। দলের তরফ থেকেও আবেদন করা হয়েছে। এমনকি আমাদের স’মকর্মী যে আইনজীবীরা রয়েছেন, তাঁরাও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছেন। সেখানেও মাননীয় আইনমন্ত্রী আরেক রকমভাবে বলেছেন, ঠিক আছে বিবেচনা করে দেখতে পারি কি না, আমরা দেখব। সুতরাং বিষয়টি যে একদম পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন, বিষয়টি যে একদম সমাধান হয়ে গেছে তেমনটি নয়। তবে আমি আশা করব, সরকারের বোধদয় হবে। সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে।’
উল্লেখ্য, রুমিন ফারহানা বিএনপির যে কয়েকজন সাংসদ সংসদে যোগ দিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে একজন সরব এমপি যার কারনে তিনি দলটিতে আলোচনায় থাকেন। তিনি সংসদে সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়ার বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারকে বারংবার আাওনুরোধ করে চলেছেন দেখিয়েছেন নানা ধরনের যুক্তি। এদিকে খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত সবসময় আইন অনুযায়ী হবে বলে জানিয়েছেন আইন মন্ত্রী। কারন তিনি আইনের উর্ধে নন, তবে সরকার আইন অনুযায়ী তার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন বলেও জানান তিনি।