‘দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। দেশের অনেক জেলা ও উপজেলায় আগে যে পরিমান সিনেমা হল ছিল সেটা কমে এখন শূন্যতে নেমেছে, অর্থাৎ সেখানে একটি সিনেমা হলও নেই। সেই সাথে কমে গেছে নতুন সিনেমা নির্মানের কাজ। এই কারনে দেশে সা’/ম্প্র’দায়িকতা ও জ’/ঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে,” এমন ধরনের মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা জায়েদ খান।
“আমার ছেলে বেলায় অনেক স্থানে বায়োস্কোপ দেখতাম। সেই সময় সিনেমা আসলেই সেটা দেখার জন্য মানুষ দিন ঠিক করে পরিকল্পনা করতো কবে যাবে সিনেমা দেখতে। তখন বর্তমান সময়ের মতো সা’ম্প্র/দায়িকতা ও জ’/’ঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
এখন দেখতে পাওয়া যায় চারিদিকে সহিং’/স’তা, ঘটছে অমা’নবিক ঘটনা। ধ’র্মকে পুঁজি করার মাধ্যমে দেশে একটি চক্র মাঝে মাঝে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে। দেশের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে আলাপকালে জায়েদ খান এভাবেই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পরিবেশের কারণে মানুষ আজ আর সিনেমা দেখার জন্য হলে যায় না, তারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলে সিনেমা দেখা থেকে নিজেদের ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গেছে, সেই সাথে বেড়েছে মান। তাই তারা আরাম করে ঘরে বসে সিনেমা দেখতে চায়, হলে আর যেতে চায় না। কারন তাদের ধারনা হলের পরিবেশ খুব খারাপ।’
আধুনিক পরিবেশের সিনেমা হল দরকার উল্লেখ করে জায়েদ খান বলেন, অনেকেই আমার কাছে জিজ্ঞেস করে, তোমার সিনেমা সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টারে কবে আসবে? পরিবেশ ভালো হওয়ায় তারা সিনেমা হলে যায়। আবার শুধু সিনেপ্লেক্স দিয়ে হবে না, সিঙ্গেল স্ক্রিনও দরকার। জেলায় যেসব জায়গায় বড় বড় মার্কেট রয়েছে সেখানে ৩০০-৪০০ সিটের মাল্টিপ্লেক্স দরকার। সর্বনিম্ন ৩০০ সিনেমা হল হলে আবার রমরমা ব্যবসা হবে।
তিনি বলেন, সিনেমা, সিনেমা হল এসব কিছু কমে যাওয়ায় আজকে দেশে সা’/ম্প্র’দায়িকতা, জ’/ঙ্গিবা’দ, নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবন বেড়েছে। সুষ্ঠু সংস্কৃতির চর্চা নেই বিধায় এগুলো বেড়েছে। আর দেশের সংস্কৃতিকে রিপ্রেজেন্ট করে চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রই যদি না থাকে, মফঃস্বলে যদি সিনেমা দেখার সুন্দর পরিবেশ না থাকে তাহলে মানুষকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। সিনেমা হল না থাকায় এখনকার অনেক নায়ককে গ্রামের মানুষ চেনে না। তারা শুধু ফে’সবুক ইউ’টি’উবের নায়ক। প্রকৃত নায়ককে গ্রামের মানুষ অবশ্যই চিনবে। আমাদের ভালো শিল্পী, পরিচালক, টেকনিশিয়ান সবই আছে।
নতুন ফরম্যাটের সিনেমা প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ধা’ক্কা লাগার পরে গান শুরু হয় এমন কনসেপ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমনকি এফডিসির মধ্যে নাচানাচি গল্পের সিনেমা এখন কেউ দেখবে না। আমরা এখন সেখান থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসেছি। প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয়। চাইলেই ‘বাহুবলী’র মতো সিনেমা দেখা যাচ্ছে। বলিউডে শত কোটি বাজেটে সিনেমা হচ্ছে। আমাদের সিনেমার বাজেট কম। তাই আমাকে শাহরুখ কিংবা প্রভাসের সাথে মেলালে হবে না। কারণ আমার ওত বাজেটের ছবি নেই।
নকল সিনেমা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে জায়েদ খান বলেন, তামিল তেলেগুর কপি ছবি চলবে না। সালমান খানের ‘রাঁধে’ ছবিতে আল্লু অর্জুনের ‘সিটি মার’ গানটি রিমেক করায় সালমান খানের মতো তারকাকে দর্শক ট্রল করছে। আমাদেরও এগুলো বর্জন করে মৌলিক সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে সিনেমা করতে হবে। কিছুদিন আগে ভারতীয় একটি ছবি আমাদের দেশে মুক্তি পেয়েও চলেনি। নিউজে দেখলাম আমাদের পুরাতন ছবির চেয়েও নাকি ওই নতুন ছবিটি আরো কম চলেছে।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুহাত ভরে দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা শিল্পী সমিতি থেকে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে একাধিকবার বসেছি। বিষয়টি এমন হয়েছে যে, ডিম আগে নাকি মুরগি আগে। সিনেমা হলওয়ালাদের কাছে গেলে তারা বলে ভালো কনটেন্ট নেই। আবার সিনেমার মানুষদের কাছে গেলে তারা বলে সিনেমা দেখানোর ভালো ব্যবস্থা নেই। প্রযোজক কোটি টাকা ল’গ্নী করার পর যদি দেখে সিনেমা চালানোর জায়গা নেই তাহলে উনি কেন এতো টাকা ঢালবেন?
হল মালিকদের উদ্দেশ্য করে জায়েদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে দেশের সিনেমা অঙ্গনের উন্নতির জন্য খুব কম সুদে (৩/৪ শতাংশ) ঋন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, আপনারা তা দিয়ে আপানাদের সিনেমা হলগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তুলুন। তাহলে মানুষ আবার সিনেমা দেখতে হলমূখী হবে। দর্শকেরা একটি নিরাপদ এবং সুন্দর পরিবেশ চায় যেখানে বসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে পারে। আপানারা সেটা মাথায় রেখে আপনাদের হলের পরিবেশ সৃষ্টি করুন। যারা ছবি নির্মাতা তাদের বলবো, আপনারা মানসম্মত সিনেমা নির্মান করুন যাতে করে সিনেমা দেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারা বাঁশি বাজিয়ে এবং করতালি দিয়ে সিনেমাটি দেখবে। সিনেমা হলে যাওয়ার পর আপনাকে নিয়ে দরশকেরা জড়ো হবে। এগুলো দেখাতে পাব সেই আশা নিয়ে আমি নায়ক হয়েছি। হলগুলো যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে আমরা এমন চিত্র দেখতে পাবো।