বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন অর্থনীতি, ধর্মসহ নানা বিষয়ে নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন।যদিও আগের মতো তাকে লেখালেখি করতে দেখা যায় না কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তিনি বেশ সরব থাকেন তিনি।ব্যক্তিগত বিষয়সহ নানা প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যক্ত করে থাকেন।সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিগত মতামত তুলে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো।
যারা প্রগতিশীল বলে নিজেদের দাবি করে, তারাও যে কত রক্ষণশীল, কত হোমোফোবিক, তা নতুন করে টের পেলাম গতকাল। একটি লোক সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে গতকাল আমি যখন বললাম ‘লোকটিকে দেখলে খুব হৃদয়বান মনে হয়।’ তখন তারা কিছু বললো না। যখন বললাম ‘লোকটিকে দেখলে মনে হয় খুব সিন্সিয়ার’, তখনও কিছু বললো না। যখন বললাম, ‘লোকটিকে দেখলে মনে হয় খুব সৎ’ , তখনও মাথা নাড়লো। অর্থাৎ মেনে নিল। কিন্তু যখনই বললাম, ‘লোকটিকে দেখলে মনে হয় লোকটি সমপ্রেমী বা সমকামী,’ তারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। বললো ‘তোকে দেখলে ডাইনি মনে হয়, তোকে দেখলে ইতর মনে হয়, তোকে দেখলে শুয়োর মনে হয়।’
যারা আমাকে অপমান করছে ডাইনি বা ইতর বা শুয়োর বলে, তারা কিন্তু ওই লোকটি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না, কাছ থেকেও দেখেনি কোনওদিন, দূর থেকে আমারই মতো শুধু বাঁশি শুনেছে, বাঁশি শুনে মুগ্ধ হয়েছে। একজন তো রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, ‘অনুমানের ওপর নির্ভর করে তাঁকে সমকামী বলাটা ঠিক হয়নি।’ আমি বলেছি, ‘আমি যে অনুমানের ওপর নির্ভর করে তাঁকে সিন্সিয়ার, সৎ, হৃদয়বান বললাম,তখন তো কেউ বিরক্ত হওনি। এর মানে তো এই যে তোমরা ওই শব্দগুলোকে ইতিবাচক শব্দ ভেবেছ, কিন্তু সমকামী শব্দটিকে নেতিবাচক শব্দ ভেবেছ, তাই রিয়েক্ট করেছ।’ অনুমান করে যদি বলতাম, ‘লোকটিকে দেখে তো মনে হয় হেটারোসেক্সুয়াল, কোনও সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে টিয়ে করে ঘর সংসার করতে পারতো।’ কেউ কি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো? একেবারেই উঠতো না। আসলে সমকামী শব্দটি তাদের কাছে নিতান্তই একটি গালি। ভেবেছে আমি বোধহয় লোকটিকে গালি দিয়েছি, সে কারণে আমাকে গালি দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।