ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় আসামি হিসেবে ২০২১ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন এক যুবক। গ্রেফতারের পর একাধিকবার আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি। আজ মঙ্গলবার আবারও তার জামিন আবেদনের শুনানির দিন ছিল। কিন্তু শুনানি শুরুর আগেই আদালতে তুলকালামের ঘটনা ঘটালেন তিনি! আদালত কক্ষে বসে গালাগাল করে নিজের পায়ে দুই জোড়া জুতা ছুড়ে মারে বিচারক!
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সহকারী আইনজীবী শ্যামল মজুমদার ঘটনার বিষয়ে বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে আসামিকে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালতে এনে বিধি মোতাবেক অভ্যন্তরীণ আদালতে রাখা হয়। দুপুর ১২টার দিকে বিচারক তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। নিজের আসনে বসার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত বিচারককে গালিগালাজ শুরু করেন।
এ সময় তাকে উচ্চকণ্ঠে বিচারককে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে জামিন দিচ্ছেন না কেন?’ এরপর পায়ে জুতা দুটি ছুড়ে দেন বিচারকের দিকে। কিন্তু সেই জুতা মানায়নি বিচারকের। হঠাৎ এমন ঘটনায় সবাই পাগল হয়ে গেল। এ সময় আদালতে কর্তব্যরত পুলিশ আসামিদের দ্রুত বাধা দেয়। এ ঘটনার পর সিআইডি, কোতোয়ালি থানা ও এসবির সদস্যরা আদালতে হাজির হন। তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিচারকের ওপর হামলার ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হবে। তিনি জানান, এ মামলায় মঙ্গলবার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন তার জামিন আবেদনও করা হয়। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক যখনই আদালত কক্ষে বসেন, তখনই জুতা ছুড়ে মারে আসামিরা।
চট্টগ্রাম কোর্ট পুলিশের (জেলা) পরিদর্শক জাকের হোসেন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হচ্ছে।
এদিকে এ মামলায় আসামির আইনজীবী আদালতের বিচারকের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসামির পক্ষে মামলা লড়বেন না বলে জানিয়েছেন। নুরুজ্জামান হোসেন। তিনি আজকের সংবাদপত্রকে বলেন, “অভিযুক্তের মানসিক সমস্যা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, আমি বিচারককে চিঠি দিয়েছি যে আমি আর আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করব না। এবং এই ঘটনার জন্য আমি বিচারকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানায় ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে আপত্তিকর মন্তব্য করায় এ মামলা করা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে আসামি কারাগারে রয়েছেন।