ঢাকাই সিনেমার অন্যতম কিংবদন্তি ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। তবে বর্তমানে ছোট পর্দায় বেশি দেখা যায় তাকে। গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে দীর্ঘদিন অভিনয় জগত থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে লকডাউন উঠতেই আবারও অভিনয়ে ফিরেছেন এই অভিনেত্রী।
কিন্তু সংক্রমন এখনো পুরোপুরি ভাবে নির্মুল হয়নি, আর এরই মধ্যে শুটিং ইউনিটে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তাই এ ব্যাপারে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। এই অভিনেত্রী জানালেন, বেশির ভাগ শুটিং ইউনিটেই এখন আর মাস্ক ব্যবহৃত হয় না, নেই স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। কারও মাস্ক থাকলেও গলায় ঝুলিয়ে রাখেন। করোনা নিয়ে নেই কোনো রকম সতর্কতা। এ নিয়ে ছোট পর্দার সমিতিগুলোও নিষ্ক্রিয়। শুটিংয়ের সবাইকে মাস্ক পরার কথা বলে বলে হয়রান এই অভিনেত্রী। এখন নিজেই শুটিংয়ে গিয়ে এক কোণে চুপচাপ থাকেন। কখনো খালি রুম পেলে একাই থাকার চেষ্টা করেন।
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার পেশা অভিনয়। শুটিং ছাড়া থাকতে পারি না। করোনা শুরু হলে দীর্ঘদিন শুটিং করিনি। সেই সময়গুলোয় আমার জীবনটা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। দীর্ঘদিন পরে শুটিংয়ে ফিরে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। তখন কড়া নিয়মের মধ্যে শুটিং ছিল। কিন্তু এখন শুটিংয়ে গেলে মনে হয় দেশ থেকে করোনা একেবারে চলে গেছে। কেউ মাস্ক পরে না। বললে একটু সতর্ক হয়। টিকা নিতে বললে উল্টো বলে, শুটিংয়ে করোনা নাই। আমরা যে একটু বয়স্ক মানুষ, সেই বিবেচনাবোধটাও কারও মধ্যে নেই। ওদের কিছু হবে না হয়তো কিন্তু আমাদের তো জীবন হাতে নিয়ে শুটিং করতে হয়। বয়স হয়েছে, আমরা সবাই নানান রোগে জর্জরিত। করোনা হলে কি আর বাঁচতে পারব?’ কথাগুলো বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন এই অভিনেত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে শুটিং ইউনিট থেকে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, শহীদুজ্জামান সেলিমসহ অনেক অভিনয়শিল্পীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনেছিলেন। এমনকি পাবনায় একটি সিনেমায় শুটিং করে বাসায় এসে করোনা শনাক্ত হন অভিনেতা এস এম মহসীন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ‘শুটিংয়ে এত মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তবু সবার মধ্যে গা ছাড়া ভাব। সম্প্রতি আমার ছোট বোন ওয়াহিদা মল্লিক জলি দেড় বছর পরে শুটিংয়ে গিয়ে পরিবেশ দেখে অবাক হয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলল, আমরা কীভাবে অসচেতনতার মধ্যে শুটিং করি। পরে সে শুটিং থেকে ফিরেই করোনা আক্রান্ত হলো। এখনো বিভিন্ন মার্কেট বা পাবলিক প্লেসে অনেকেই মাস্ক পরে। নাটকের সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের তো উদাহরণ সৃষ্টি করার কথা ছিল। কিন্তু দিন দিন আমরাই অসচেতন হচ্ছি।’
শুটিংয়ের সহকর্মী ও কলাকুশলী করোনার কোনো নিয়ম মানছেন না, এটা নিয়ে ছোট পর্দার কোনো সংগঠনের নেতা বা শুটিংয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে? ‘শুটিংয়ে সিনিয়র যারা থাকে, তাদের বলি। তারা ধমকধামক দিয়ে মাস্ক পরায়। নির্মাতাদের বলি, তোমরা মাস্ক পরো অন্যরা পরে না, একি! তখন তারা কিছুটা সচেতন হয়। নির্মাতা চাইলেই সবাই মাস্ক পরতে বাধ্য। এখন আবার করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট আসছে। শীত এসে গেছে। কী হয় আল্লাহই জানেন। পুরো শীতের সময় আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সবাইকে অনুরোধ করব একটু সচেতন হোন, প্লিজ।’ এ সময় তিনি আরও জানান, তাঁর করোনা আক্রান্ত বোন ও বোনজামাই এখন আগের চেয়ে ভালো। তেমন কোনো জটিলতা নেই। শিগগির বাসায় ফিরতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে অভিনয় কর্মজীবন শুরু করেন শর্মিলী আহমেদ। ক্যারিয়ারে একাধিক ব্যবসায় সফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি, আর সেই সঙ্গে পেয়েছেন কোটি ভক্তদের ভালোবাসা। বর্তমানেও বেশ জনপ্রিয়তার সঙ্গেই অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।