রংপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খোলার ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের নেতাকর্মীরা। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাসান আলীকে রংপুর নগরের শাপলা মোড়ের ভাড়া বাসা থেকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাকে বর্তমানে থানা হাজতে রাখা হয়েছে।
হাসান আলী রংপুর মডেল কলেজের বাংলা বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আটক হওয়ার পর তার পরিবার জানিয়েছে, কিছু দিন আগে রফিক আহমেদ রাজ নামে একজন শিক্ষক ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে রংপুরের শাপলা মোড়ে ‘শহীদ আবু সাঈদ কোচিং সেন্টার’ নামে স্পোকেন ইংলিশ শেখানোর প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেন। হাসান আলীকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তিনি ওই কোচিং সেন্টারের জন্য ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দিয়েছেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের নেতাকর্মীরা হাসান আলীর বাসায় যান। তাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের পর হাসান আলীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা যায়, হাসান আলীকে থানার হাজতে রাখা হয়েছে এবং তার স্ত্রী শারমিন খাতুন বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। একই সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বসে ছিলেন।
শারমিন খাতুন জানান, তার স্বামী রফিক আহমেদের কাছ থেকে ইংরেজি শিখতেন এবং রফিক আহমেদ কোচিং সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি (রফিক) হাসান আলীকে কোচিংয়ের জন্য ফেসবুকে পেজ খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। শারমিন আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাদের ধারণা করেছেন যে, কোচিং সেন্টারের পেজ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “আবু সাঈদের নাম ভাঙিয়ে কেউ ব্যবসা করলেই আমরা তার বিরোধী। এই ঘটনায় কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার মতে, এটা কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে।”
অপরদিকে, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, নিরাপত্তার কারণে হাসান আলীকে থানায় রাখা হয়েছে এবং ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় আনা হয়।
এই ঘটনাকে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। রংপুর আদালতের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, “গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা আমলযোগ্য অপরাধ ছাড়া কাউকে পুলিশ আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারে না। এটি আইন ও পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”