বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শেখ হাসিনার একটি অডিও বার্তা শনিবার আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।
১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই অডিওতে শেখ হাসিনা বলেন, “আবু সাঈদ গুলি খাওয়ার পর তাঁকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি, কিন্তু সাঈদকে নেওয়া হয়নি। চার-পাঁচ ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেওয়ার সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়।”
তবে ঘটনাস্থল, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, এবং ময়নাতদন্তের তথ্য থেকে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়।
সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ
- দৈনিক কালের কণ্ঠ ও ডেইলি সান-এর তথ্য অনুযায়ী, আবু সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
- ডেইলি স্টার জানায়, সংঘর্ষের সময় দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
- হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিনের বক্তব্য অনুযায়ী, হাসপাতালে আনার আগেই সাঈদের মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন
রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলামের মতে, ছররা গুলির আঘাতে সাঈদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
মামলার তথ্য
১৬ জুলাই রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, আহত অবস্থায় সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের সত্যতা
উপস্থিত প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত এবং ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই আন্দোলনকারীরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। মৃত্যুসনদ অনুযায়ী, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। সুতরাং শেখ হাসিনার দাবি—সাঈদকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল—এটি অসত্য।
আবু সাঈদ আহত হওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থলের প্রমাণের কোনো মিল পাওয়া যায় না।