সম্প্রতি উশৃঙ্খল প্রকৃতির তারকাদের ভীড়ে প্রকৃত শিল্পীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। যোগ্য হওয়ার স্বর্তেও তাদের প্রাপ্য সম্মান টুকুও পাচ্ছেন না।যার কারণে গুনি শিল্পীরা দিন দিন আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন।যার কারণে বিনোদন জগতে অনেকেই অবহেলার শিকার হচ্ছেন।বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
আরেকজন সংগীত তারকাকে চোখের সামনে অবহেলিত হতে দেখছি। তিনি আবিদা সুলতানা। আবিদা সুলতানার প্রচুর অবদান আছে আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে, চলচ্চিত্রে। তাঁর কন্ঠের মিঠা আওয়াজ হৃদয় রোমাঞ্চিত করে। কিন্তু আমরা এত অজ্ঞ যে সাবিনা ইয়াসমিন রুনা লায়লা ছাড়া আমরা আর কাউকে চিনতে চেষ্টা করিনা। সাবিনা রুনা আমাদের সংগীতজগতের দুই মহীরুহ। সংগীতের এই দুই দিকপাল আমাদের সংস্কৃতিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি তাঁরা পেয়েছেনও প্রচুর। রুনা লায়লার হাতে এত অজস্র অ্যাওয়ার্ড উঠেছে যে এখন তাঁর হাতে কোনো পুরস্কার বা অ্যাওয়ার্ড দেখলে আনন্দিত হইনা। সাবিনা ইয়াসমিনের বেলায়ও তাই। মোদ্দা কথা হচ্ছে আবিদা সুলতানা নামে আমাদের একজন সুরের নক্ষত্র আছেন। আমি তো আবিদা আপার গানগুলো শুনলে হয়রান হয়ে যাই। অসংখ্য প্রিয়গান শুনেছি তাঁর সুরেলা কণ্ঠে “বিমূর্ত এই রাত্রি আমার” শুনলে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এই গানটির প্রতিটি লাইনে বুকের পাঁজরভাঙ্গা দরদে আমি শিহরিত হয়। আবিদা সুলতানার অদ্ভুত সুন্দর গায়কী আমার কাছে অন্যতম এক আশ্চর্য। কিভাবে তিনি সুরের সুধা ঢেলে শ্রোতাদের হৃদয়কে প্লাবিত করেছেন সত্যি আমি আশ্চর্য হই। কি মর্মস্পর্শী গায়কী তাঁর। আবিদা সুলতানা আমাদের অনেক দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। আমরা কপর্দকহীন হত-দরিদ্র, অনেকাংশে আমরা অমানবিকও। রাষ্ট্রীয়ভাবে আবিদা সুলতানাকে মর্যাদা দেয়া হয়নি আজ অবধি। প্রতিবছর গায়িকা নামের কিছু নটী নটীপনা করে পদক পুরস্কার হাতিয়ে নিচ্ছে। আবিদা সুলতানাকে দিয়ে তো নটীপনা সম্ভব নয়। তাই তিনি উগ্র উশৃঙ্খল প্রকৃতির গায়িকাদের ভীড়ে চাপা পড়ে গেছেন।
আমার কিশোরীবেলায় প্রথম চোখে রঙিন স্বপ্ন জেগেছিল তাঁর “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী” গানটি শুনে। কিংবা “একটা দোলনা যদি কাছে পেতাম” শুনে। “বিমূর্ত এই রাত্রি আমার” শুনে আমি কাঁদতাম। কিন্তু কেন কাঁদতাম তাও জানতাম না। এই গানের সুর মনকে কাঁদোকাঁদো করে ছেড়ে দেয়। আমার কিশোরী মনে প্রেমের আবহ তৈরি হয়েছিল তাঁর ”তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে”, ”একি বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়” এবং ”মধুচন্দ্রিমার এই রাত যেন গল্প বলে যায়” শোনার পর। আমি পুলকিত হই চমকিত হই আমাদের একজন আবিদা সুলতানা আছেন বলে। যিনি পুরস্কার বা স্বীকৃতির পরোয়া না করে নিঃস্বার্থভাবে কণ্ঠশ্রম দিয়ে চলেছেন। তবে পুরস্কার একজন শিল্পীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তাকে উৎসাহিত করে। আজ যদি আবিদা আপা আশা ভোঁসলে অনুরাধা পাড়োয়াল অলকা ইয়াগনিক কবিতা কৃষ্ণমূর্তিদের মত ভারতীয় হতেন অজস্র অ্যাওয়ার্ড পেতেন, সম্মাননা পেতেন। জানতে চাই আর কত যুগ গান গাইলে আবিদা সুলতানার শিল্পীসত্ত্বা মূল্যায়িত হবে??