এক শহর মিরপুর ১০-এ ফুটপাথে চশমার দোকান সাজিয়েছেন। তবে তিনি খুব বিরক্ত। কারণ পুরো জায়গাটি ভরে গেছে ভিজিটিং কার্ডে। রংবেরঙের কার্ড। পরিষ্কার করতে করতে তিনি বললেন, দেখছেন কারবার? রোজ পরিষ্কার করি। সূর্য উঠার আগে আবার জমে যায়।
কার্ডগুলোতে দেখা গেল রহস্যজনকভাবে কিছু নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি জুড়ে দেয়া তিনি বললেন কোন ‘ভাই’ এরা জানেন? খোঁজ নিয়ে দেখেন। ওই যে ওভারব্রিজ দেখছেন, সেখান থেকে সব ফেলে ওরা।
দোকানির কথামতো ওভারব্রিজে গিয়ে দেখা মিললো ১৮-২০ জন । তাদের টার্গেট চলমান পথচারী। ওভারব্রিজে তারা এমনভাবে অবস্থান করে, পথচারীদের হাঁটাই মুশকিল। কেউ কেউ সেসব যুবকের দেয়া কার্ড নিচ্ছেন।
কেউ কেউ আবার বিরক্ত হয়ে তাদের গালি দিচ্ছেন। তবে তাদের কিছু আসে যায় না তাদের। তারা জোর করে হাতে ধরিয়ে দেয় কার্ড।
এমন কিছু কার্ড নিয়ে দেখা গেল বিষয়টা আসলেই রহস্যজনক। সেসব কার্ডে ‘সিফাত ভাই’, ‘রবি ভাই’, ‘স্বাধীন ভাই’, ‘তুষার ভাই’, ‘চান্দ ভাই’ ‘মাটি ভাই’, ‘শান্ত ভাই’ এমন আরও হরেক নাম বড় করে লেখা। নিচে লেখা আবাসিক হোটেল। এসি/নন এসি। তাতে যুক্ত করা দুটা বা একটা মোবাইল নম্বর। ছোট্ট করে হোটেল কক্ষের ছবি। কোনোটায় গোলাপফুল বা ইন্টারনেট থেকে নামানো মেয়ের ছবিও দেয়া। কিন্তু সেসব হোটেল বা গেস্ট হাউজের কোনো ঠিকানা উল্লেখ নেই। শুধু লেখা এলাকার নাম। কোনোটায় লেখা থাকে- আসার আগে ফোন দিন।
কার্ডের সূত্র ধরে এক নম্বরে ফোন দেয়া হলে বললেন, কতোদূর আছেন? তিনি ফোনে ডিরেকশনও দিলেন। বললেন, সোজা কাজীপাড়া বরাবর হাঁটতে থাকুন। মেট্রোরেলের পিলারের (পিলারের নম্বর দিয়ে) কাছে আসুন। তার কথামতো সেখানে গেলে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা কয়েকজন পিছু নেয়। কার্ডের নম্বরওয়ালা সে লোক পুনরায় ফোনে বললেন, এই যে একটু ডানের বিল্ডিংয়ের দিকে তাকান। তিনি জানালা দিয়ে হাত ইশারা করছেন। পৌঁছতেই ঘিরে ধরলো অন্তত ছয়-সাতজন। তারা বললেন, ভাইয়ের কাছে যাবেন? আসেন। উপরে গেলে সেই কথিত ‘ভাই’ প্রশ্ন করলেন, কেমন বয়সী মেয়ে চান? স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বা যে শহরের চান সব আছে। বলেই তিনি পেছনে তাকাতে বললেন। ১৫-২০ জন নানান বয়সী মেয়ে সেখানে বসে আছে। সরাসরি অফার করে বসলেন তিনি। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। চাইলে সারারাত থাকতে পারবেন। এমন আরও অফারই তিনি করলেন।
জানতে চাওয়া-প্রকাশ আবাসিক হোটেলের কথা বলে অসামাজিক কাজ চালাচ্ছেন। কেউ বাধা দেয় না? তিনি বলেন কার এত ক্ষমতা ‘বড় ভাই’ আছে না? তবে তারা তাদের ‘বড় ভাইয়ের’ নাম বললেন না। তাদের ভাষামতে, সবই নাকি ম্যানেজ করা থাকে।তবে কার্ডে এসব ‘ভাই’দের আসল নাম দেয়া থাকে না। এরাই হচ্ছে যৌন প্রতিনিধি দালাল। এভাবে হোটেলের কথা বলে যৌনকর্মীদের কাছে নিয়ে যায়। কখনো বা সরাসরি অফার করে বাসায় সাপ্লাই দেয়ারও।
কার্ডে কেন হোটেলের ঠিকানা থাকে না? বললেন, প্রয়োজন পড়ে না। নিজেরাই নিয়ে আসি কাস্তমারদের।
মিরপুর ১০-এর ওভারব্রিজের সেসব যুবকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাদের কেউ বাধা দেয়? একজন ব্যক্তি বললেন, কে বাধা দিবে? তারা যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন আরও পাঁচ-ছয়জন এসেছিলেন প্রতিবেদকের ওপর ক্ষেপে গিয়ে বললো এখান থেকে যান। ডিস্টার্ব করবেন না। তাদের দাপট সত্যি বেশ ভয়ঙ্কর। জুটে গেল আরও জনবল তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এসে তাদের অভয় দিলেন। এইখানে তোদের কেউ কিছু বলে না। নির্ভয়ে কার্ড দিয়ে যা। তার কথা মতো বাবর ও কয়েকজন মিলে কার্ডগুলো ওভারব্রিজের দেয়ালে সাজাতে লাগলেন। এই দলের ১০-১৫ বছর পুরনো কিশোরও রয়েছে। এই দালালদের যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নাম প্রকাশ করে না।
মিরপুর ১০, ১, ২ ওভারব্রিজ, ফুটপাথ বা প্রকৃতপক্ষে চলতে চলতে গাড়িতে যারা সক্রিয় কাজ করে তাদের বেশ কিছু নেতার ভাষামতে, এসব এলাকায় বেশকিছু হোটেলে দেহ ব্যবসা চলে, কখনো কখনো বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়েও।
মূমুক কার্ড, অসামাজিক কার্যকলাপে পথচারী দোকানি, স্থানীয় বাসিন্দারাও। একজন ফুল বিক্রেতা বললেন, মাঝেমধ্যে খুব লজ্জায় পড়তে হয়। বাসের এক যাত্রী ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যখন এসব পথে আসি তখন খুব দ্রুত চলে যাই। চোখ সরিয়ে নেই। তারা শরীর বরাবর কার্ড ছুড়ে। ছেলে-মেয়ের গায়েও কার্ড এসে পড়ে।
গত বৃহস্পতিবার মিরপুর-১০, মিরপুর-২, মিরপুর-১, টেকন গেল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মগবাজার কাওরান বাজার, ফার্মগেট এলাকাতেও দেখা একই চিত্র। গলি থেকে মূল সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কার্ড পড়ে রয়েছে। ঠিকানাবিহীন একমাত্রকে যোগাযোগের মাধ্যমে শুধু মোবাইল নম্বর। কেউ কল করলে তারাই বাজারে চিনিয়ে নিয়ে যায়। নজর, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া, গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ, বেকার নেতাকদের উপর। আগে এই দেহ ব্যবসা প্রচারণা আড়ালে চলতো এখন কোনো রাখঢাক নেই। কনো কোন সময় যৌন প্রার্থীরা মাস্ক বাস্কর বোরকা পরে নিজেরাই স্বাগতিক ভিজিটিং কার্ড বিলি করে।
এ বিষয়ে চাওয়া হয় রাজনৈতিক দারুস সালামের মত ভার্ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার পিএম-এর কাছে। তিনি বলেন, এটা আসলে বিব্রতকর একটা বিষয়। আমরা স্পেসিফিক নিউজ বিগত আইনগত ব্যবস্থা নেই। এসব ব্যাপারে কোনো ছাড় দেই না। শুধু এটা কেন, সবদিক দিয়েই। মাদক বলেন বা অন্য যেকোনো কিছু, আমরা ব্যবস্থা নেই
মিরপুর মডেল নজির (ওসি) মোহাম্মদ মহোদয় বলেন, আমরা অবশ্যই প্রাপ্তি বন্ধ করব। কারণ সমাজ দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অনেক খারাপ। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি প্রতিরোধের। আইনের কঠোরতা প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত মনিটরিং করি। আমরা পেলেই ধরি। যখনই এ ধরনের খবর পাই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেই। তবে আশেপাশে হোটেলগুলো এ ধরনের অসমাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আমরা পাইনি।