বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমান বেশ কিছু বছর ধরে রয়েছেন বিদেশের মাটিতে। আর সেই থেকেই তার নাম দেশে চলছে বেশ কিছু মামলা। এবার জানা গেলো এ নিয়ে নতুন খবর। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার এই রায় দেয় আদালত।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি মামলার নিয়মিত প্রক্রিয়া। পলাতক আসামি আদালতে হাজির না হলে আদালত তার সম্পদ জব্দ বা জব্দ করার নির্দেশ দেয়।
আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, এসব রাজনৈতিক মামলায় দেশের কারও স্বার্থ, আস্থা ও বিশ্বাস নেই। জনগণ একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায় আছে। সেই সরকার এসব মামলার সঙ্গে জড়িতদের ধরনও ফাঁস করবে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সমকালকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্রতিহিংসার জন্য তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তবে অন্য কোনো মামলার হদিস না পেলেও তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দুদককে ব্যবহার করে হয়রানির জন্য এসব মামলা পরিচালনা করছে।
গত বছরের ১ নভেম্বর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গ্রহণ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ৫ তারিখে আদালতে সেই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের নিজ নিজ ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। এরপর আদালত তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ১৯ জানুয়ারির মধ্যে সম্পদ জব্দের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে গত বছরের ২৬ জুন তারেক ও জোবায়দাকে পলাতক ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা সংক্রান্ত পৃথক তিনটি রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তারেক-জোবাইদাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়। এই দম্পতি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন।
ওইদিন হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, তারিক রহমান ও জোবায়দা রহমান পলাতক, তাই তাদের রিট গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী এই মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। একই সঙ্গে এ মামলার সব নথি ঢাকার বিচারিক আদালতে পাঠাতে বলেন তিনি। এছাড়া মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় জোবাইদা রহমান ও তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে একই বছর তারিক রহমান ও জোবায়দা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। এদিকে এ মামলায় ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় দুদক। আসামিরা মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সপরিবারে লন্ডনে চলে আসেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাস করছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ চার মামলায় এরই মধ্যে সাজা পেয়েছেন তারেক রহমান।
প্রসঙ্গত, এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে দলের কাছ থেকে তারেক রহমান ফিরে আসার কথা থাকলেও এখনো দেখা যায়নি এর বাস্তবতা। তবে সেখানে বসেই তিনি দল চালাতে দিচ্ছেন নেতৃত্ব।