আবারও পুড়েলো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, জেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান মুশফিক হোসেন চৌধুরীর কপাল।শরিক জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দিতে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন এম এ মুনিম চৌধুরীকে দেয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন মুশফিক হোসেন চৌধুরী। এর আগে এ আসনের বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর ২০১১ সালের ২৭শে জানুয়ারি উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাতের কাছে পরাজিত হন ডা. মুশফিক
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। আসনটি জাতীয় পার্টিকে না দিলেও গত নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী ফরিদ গাজীর ছেলে শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজীকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়। টানা ৮ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন সত্তর বছর বয়সী ড. মুশফিক। কিন্তু এর মধ্যে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ছিলো ড. মুশফিক। তিনি ভেবেছিলেন- এত ত্যাগের পর অন্তত নেত্রী তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না।
আর সে বিশ্বাস থেকে দলীয় প্রধানকে ডা. মুশফিক বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন শেষবারের মতো তাকে এমপি হওয়ার সুযোগ দিতে। তার কথায় গুরুত্ব দিয়ে দলীয় প্রধান তাকে নৌকা মনোনয়নও দিয়েছিলেন। তার মনোনয়ন পাওয়ার পর কর্মী-সমর্থকদের মনে আশার আলো জ্বলেছিল অন্তত শেষ বয়সে এসে তাদের নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
সেই আশায় মরিয়া হয়ে কাজ করছিলেন তার সমর্থকরা। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে দীর্ঘ দরকষাকষির শেষ পর্যায়ে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে মুশফিক হোসেনকে কাটতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে। এর একটি বড় কারণ জাপা সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মুনিম বাবু যিনি দলের নীতিনির্ধারকদের একজন।
এই জাপা নেতা এ আসন পেতে নিজ দলের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করেছেন। তাই জোট রক্ষায় এ আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এ বিষয়ে ড. মুশফিক হোসেন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। যৌবন থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত দলীয় প্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। দলে যোগ দিতে গিয়ে বেশ কয়েকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
আমার গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিরোধী দলের সন্ত্রাসীরা। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এক চুলও পিছপা হয়নি। দলীয় প্রধান আমাকে এবার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আবার দলের বৃহত্তর স্বার্থে শরিকদের এ আসন ছেড়ে দিতে আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি দল ও দেশের স্বার্থে এ আদেশ মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে আমার।
হবিগঞ্জের ৪টি আসনে ৩৬ প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হবিগঞ্জ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদনপত্র জমা দেন। হবিগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী মুশফিক হোসেন চৌধুরী ছাড়াও ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ও জাকের পার্টির প্রার্থী ইয়াসমিন আক্তার মুন্নি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে সরে দাঁড়ালেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাদিকুল মিয়া। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৪ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী আবুল খায়ের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।