বাংলাদেশের পরিচিত এবং জনপ্রিয় চেনা মুখ সোহেল তাজ (Sohail Taj)। তিনি পারিবারিক ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সক্রীয় রয়েছেন। তার আরও একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের একমাত্র পুত্র। প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে তিনি রাজনীতির অঙ্গনের বাইরে রয়েছেন। তবে তিনি আবারও রাজনীতিতে সক্রীয় হচ্ছেন কিনা এই নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
‘অভিমান’ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। এরপর তিনি বিদেশে চলে গেলেও কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। তবে দেশে ফেরার পরও তিনি রাজনীতিতে ফেরেননি। তিনি তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের (Tajuddin Ahmed) একমাত্র পুত্র। দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও সোহেল তাজ এখন বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে- সোহেল তাজ কি আবার রাজনীতিতে ফিরবেন? শারীরিক কসরত নিয়ে ব্যস্ত সোহেল তাজ একটি সুস্থ-সবল তরুণ সমাজ গড়তে চান। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিতে হলে সুস্থ তরুণদের কোনো বিকল্প নেই। এই কথা মাথায় রেখেই খোলা হয়েছে ‘ইন্সপায়ার ফিটনেস সেন্টার’। তিনি ‘হটলাইন কমান্ডো’ দিয়ে টেলিভিশনে আসেন। যেখানে কথা বলেন, সামাজিক সচেতনতা নিয়ে। নারীর প্রতি সহিং/স/তা, মা/দ/ক, সড়ক দুর্ঘ/ট/না, খাদ্যে ভেজালসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এমনকি রাজনৈতিক ইস্যুতে ফেসবুক লাইভেও সক্রিয় তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরাসরি সরকার বা দলের কোনো পদে না থাকলেও নিজের কর্মকাণ্ডে আলোচনায় রয়েছেন সোহেল তাজ। সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে সোহেল তাজ এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও স্পষ্টই বলেছেন, কোনো অনাগ্রহ নেই। “যদি দেশের কখনও প্রয়োজন হয়, অবশ্যই,” তিনি বলেছিলেন, আমাদের রক্তই এই দেশের জন্য। আমি দিতে রাজি। সোহেল তাজ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি ফিরে এসে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী সোহেল তাজকে ছেলের কোলে জড়িয়ে ধরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সোহেল তাজকে সরকারে নয়, দলে সক্রিয় থাকার কথা বলা হয়। জবাবে বঙ্গতাজপুত্রও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাবেন। তখন ভাবা হয়েছিল সোহেল তাজ হয়তো আবার রাজনীতিতে ফিরতে পারেন। গত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগেও তিনি কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে গুঞ্জন ছিল। যদিও তার কিছুই হয়নি। সোহেল তাজ দলীয় রাজনৈতিক সমাবেশেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেননি। সোহেল তাজ ১৯৭০ সালের ৫ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় বোন শারমিন আহমেদ রিপি (Sharmin Ahmed Ripi); মেজোর বোন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট এবং গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এবং ছোট বোন মাহজাবিন আহমেদ মিমি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে (political) সোহেল তাজের পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর (Bangabandhu) রাজনৈতিক সহচর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হ/ত্যা/র পর ওই বছরের ৩ নভেম্বর কা/রা/গা/রে জাতীয় চার নেতাকে গু/লি করে হ/ত্যা করা হয়। কারা/গা/রে নি/হ/ত জাতীয় চার নেতার একজন ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওই পরিবারের সন্তান হিসেবে সোহেল তাজের রাজনৈতিক সক্রিয়তা অত্যন্ত প্রত্যাশিত। তবে সরাসরি রাজনীতি না করেও জনগণের জন্য কাজ করা যায় বলে মনে করেন সোহেল তাজ। মানুষের সেবা করতে চাইলে সে তার জায়গা থেকে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে যে ভালো কাজ শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই সম্ভব। আমি ভিন্ন চিন্তায় বিশ্বাসী। আমি মনে করি আপনি যদি দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করতে চান। যেখানে আছেন সেখান থেকে কাজ করতে পারেন।’২০০১ সালের নির্বাচনে সোহেল তাজ গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।২০০৮ সালে একই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য হন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।ব্যক্তিগত কারণে একই বছরের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।তবে তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে সে সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল।
বর্তমান সময়ে শারীরিক চর্চা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সোহেল তাজ। এমনকি শরীর চর্চা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করছেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় শরীর চর্চার নানা ধরনের ভিডিও প্রকাশ করছেন। তার লক্ষ্যে সুস্থ ও সবল তরুণ সমাজ গড়ে তোলার।