দেশের বিনোদন জগতের বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। তিনি নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশের প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমা এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। আজ এই জনপ্রিয় অভিনেতার ৫৪তম জন্মদিন। তার এই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে ব্যক্তি ও কর্মজীবন নিয়ে বেশ কিছু কথোপকথন হলো তার সাথে।
অভিনেতা জাহিদ হাসান–এর আজ ৫৪তম জন্মদিন। দিনটি নিয়ে তিনি নিজেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। বিশেষ এই দিনটিতে কোনো শুটিং রাখেন না, পরিবারের সঙ্গেই কাটান।
শুভ জন্মদিন। দিনটি নিয়ে পরিকল্পনা কী?
ধন্যবাদ। তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না। বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকা হয়। স্ত্রী, সন্তান, সহকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীরা যেভাবে আমাকে নিয়ে আগ্রহ দেখান, এটা আমাকে মুগ্ধ করে। গুরুত্বহীন আমাকে তারা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন। সবার সঙ্গে দিনটি কাটাব।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সহকর্মীদের কাছ থেকে কোন কথাটা সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে?
আপনার জেনারেশনের অনেকেই নেই, আপনি এত দিন ধরে টিকে আছেন কী করে। আমার কাছে মনে হয়, আবদুল্লাহ আল–মামুন, ফরীদি ভাই বেঁচে থাকলেও নিয়মিত কাজ করে যেতেন। আমি আমার মতো করেই কাজ করে যেতে চাই।
শোনা যায়, শিল্পীদের মধ্যে কখনো আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না, নিজেদের মধ্যে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা থাকে। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
এটা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য নয়, আবার মিথ্যাও নয়। এই জন্য পরিবেশ দরকার। সবার মধ্যে শিক্ষা দরকার। আবদুল্লাহ আল–মামুন, হুমায়ুন ফরীদিসহ অনেককেই দেখেছি যাঁরা পড়াশোনা, অভিনয়ে দক্ষ ছিলেন। মেধাকে মূল্যায়ন করতেন। তখন কারও পেছনে লাগা বা টেনে ধরার চলই ছিল না। কিন্তু এখন অনেকেই ক্যারিয়ারের জন্য শিক্ষাকেই মাঝপথে ছেড়ে দেয়। শিক্ষা, পড়াশোনা কম থাকায় অন্যের পেছনে লাগে। যে কারণে তাদের মধ্যে রিভেঞ্জ, ঈর্ষা কাজ করে।
আপনার কাছে জীবনে সুখী থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কী?
প্রথমত ভালো স্বাস্থ্য। পরে হাসিখুশি থাকা, যা পেয়েছি তাতেই শুকরিয়া করা, পরিশ্রমী হওয়া, নিজের ভুলগুলো কাছ থেকে দেখা। আমার মনে হয়, ভালো থাকার জন্য সব সময় অর্থের দরকার নেই। অনেকের প্রচুর টাকা আছে, কিন্তু সুখী না। আবার টাকা না থেকেও অনেকেই ভালো আছে।
অনেক নির্মাতা বলেন, আপনি রাগী, শুটিং সেটে উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
কারা বলেন, সেটা জানা দরকার। পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। শুটিংয়ের আগে যেভাবে পরিকল্পনা হয়, অনেক সময় শুটিংয়ে গিয়ে সেভাবে পাই না। কথা-কাজে মিল থাকে না। ইচ্ছে করে কেউ ঝামেলা করে না।
অনেকেই নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপাতে চান। কত ছাড় দিয়ে কাজ করা যায়?
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?
অনেক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। হাঁটতে গেলে হোঁচট খাব, এটাই স্বাভাবিক। আফসোস, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি। ভবিষ্যতে হয়তো একই ভুল করব। অনেক জায়গায় যে রিঅ্যাক্ট করা দরকার ছিল, সেটা করিনি। কথা শুনেছি, কিন্তু প্রয়োজন মনে করলেও বলিনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কাজ করেছি।
এখন কী শুটিং করছেন?
ওয়েব সিরিজ ‘মা/ফি/য়া’র শুটিং শেষ করলাম, ডাবিং বাকি আছে। নাটকের শুটিং নিয়মিত চলছে। আরও নতুন ওয়েব ফিল্ম করব, সিনেমা নিয়ে কথা হয়েছে, চুক্তি করিনি। নাটক প্রযোজনাও করছি।
একই সঙ্গে আপনি অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রযোজক। কাজের ক্ষেত্রে এখন কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করছেন?
এখন নাটকের জন্য শিল্পী পাওয়া যায় না। অনেকেই বলেন সিরিয়াল করি না। অনেকে অল্পতেই অনেক কিছু পেতে চান। তা ছাড়া চেহারা এখন টিভিতে না দেখালেও ঠিকই মডেল, অভিনেত্রী হওয়া যায়। টিকটক করলেও সে মডেল। সম্প্রতি দুই মডেল গ্রে/প্তা/র হলেন, অথচ তাঁদের চিনি না।
টেলিভিশন নাটক অনেকটাই গুরুত্ব হারাচ্ছে?
এখন টিভি নাটকের অবস্থা ভালো নয়। চ্যানেলের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিজ্ঞাপন একটা গ্রুপের হাতে চলে গেছে। এখন একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ হচ্ছে।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভক্ত-অনুরাগীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি তার অভিনয়ের ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। এমনকি তিনি নিজেকে একজন সফল অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার রয়েছে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী।