Friday , November 22 2024
Breaking News
Home / opinion / আফগানিস্তানকে দেশ হিসেবে মনে করেন না, সেখানে পেট্রলের দাম ৯২ টাকা: তুহিন

আফগানিস্তানকে দেশ হিসেবে মনে করেন না, সেখানে পেট্রলের দাম ৯২ টাকা: তুহিন

ভেনেজুয়েলাতে পেট্রলের লিটারপ্রতি দাম ২ টাকা, ইরানে ৫ টাকা। এই দুই দেশ পেট্রল উৎপাদন করে। সে কারণে তারা পেট্রলের দাম কমিয়ে রাখছে। বাংলাদেশ চাহিদার শতভাগ পেট্রল উৎপাদন করে দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া কনডেনসেট। বাংলাদেশে পেট্রলের লিটার ২০ টাকা হওয়া উচিত, তাতেও সরকার লাভ করবে। কিন্তু এখানে পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা লিটারের যুক্তি কি আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেয়া কোনভাবেই যৌক্তিক না।
আবার পেট্রল আমদানি করে আফ্রিকার বেনিন, তাদের দেশে পেট্রল লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা। আফগানিস্তান যেটাকে আপনারা দেশই হিসেবে মনে করেন না, সেই আফগানিস্তানে পেট্রলের দাম ৯২ টাকা।
তাহলে আমাদের অবস্থা বেনিন ও আফগানিস্তান থেকে কি খারাপ? নাকি আমেরিকা থেকে ভালো? এসব প্রশ্নের জবাব দরকার।
১.
বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের আকাশছোয়া বাড়তি দাম শুধু বিশ্ববাজারের কারণে বেড়েছে এটা আমার মনে হয়নি। কারণ বিশ্ববাজারের ট্রেন্ড এখন নিচের দিকে। তার থেকে বড় কথা, আমরাতো আজকের দিনের তেল আজকের দিনে কিনি না।
বাংলাদেশ জ্বালানি তেল কিনে থাকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক জ্বালানি বিষয়ক ম্যাগাজিন প্লেটসের দামকে ভিত্তি ধরে। সে হিসেবে বাংলাদেশ যেদিন জাহাজে তেল ভরবে তার আগেরদিন, জাহাজে তেল ভরার দিন ও তার পরের দিন এই তিনদিনে প্লেটসে প্রকাশিত দাম গড় করে জ্বালানি তেলের মূল্য ধরা হয়। এর বাইরে প্রিমিয়াম দেওয়া হয়। প্রিমিয়ামের মধ্যে রয়েছে জাহাজ ভাড়া, ইন্স্যুরেন্স ও অন্যান্য। সব মিলিয়ে গড়ে প্রিমিয়াম গত ১০ বছরে দুই ডলার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন বা কখনো কখনো চার ডলার হয়েছে ব্যারেলপ্রতি।
বছরে দুবার বিপিসি জিটুজি ও দরপত্রের মাধ্যমে তেল কেনে। মূলত দরপত্রে ফাইট হয় তেলের দাম না, প্রিমিয়াম নিয়ে। কে কত কমদামে প্রিমিয়াম দিতে পারে সেটা নিয়ে দরপত্রে লড়াই হয়।
তো, ফিউচার মার্কেট বা সামনের দিনে জ্বালানি তেলের দাম কমবে এমন ভবিষ্যাৎবানী করছে সবগুলো প্রতিষ্ঠান করছে। সারা বছর ভেঙ্গে ভেঙ্গে জ্বালানি তেল কিনি যেহেতু আমাদের রিজার্ভ করার সুযোগ নেই। সে কারণে এই বিপুল পরিমান দাম বৃদ্ধি কোনভাবেই যৌক্তিক না।
২. বিপিসি গত সাত বছরে ৪৭ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই মুনাফা থেকে সরকার আবার তার কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বাকি থাকল ৩৯ হাজার কোটি টাকা, সেই টাকা থেকে যদি প্রয়োজন তাহলে ভর্তুকি দিক।
৩. বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে কোনভাবে শতভাগ দেশীয় গ্যাসের উপজাত দিয়ে উৎপাদিত পেট্রলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। বরং পেট্রলের দাম লিটার প্রতি ৫০ টাকা রাখলেও লাভ করবে সরকার।
এই পয়েন্টটাতে ফোকাস করেন, যে তেল বাইরে থেকে আমদানি করে না সরকার সে তেলের দাম ৫১ ভাগ কেন বাড়াবে? তাহলে বিশ্ববাজারের মুলোটা আসলে ঠিক না। আসল বিষয় চাপ অন্যকোনখানে। সেটা খোলসা করে বলতে হবে।
আইএমএফপন্থি বুদ্ধিজীবীরা সমানে IMFকে ডিফেন্ড করছে। সেটা তারা করবেই। IMF’র চ্যালা চামুন্ডরা যতই IMFকে ডিফেন্ড করুক, কিন্তু আমরা বলবোই go back IMF।
৪. IMF’র ঋন বরং বেশি ক্ষতি করবে ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে। ৬২ শতাংশ ডিজেল পরিবহনে ব্যয় হয়। ১০ শতাংশ শিল্পে লাগে। কৃষিতে ১৫ শতাংশ।
এখন IMF’র ঋন নিতে গিয়ে কৃষি উৎপাদনে কোনমতে চাপে পড়ে তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটে পড়বে।
আমি নিজে উত্তরবঙ্গের খাদ্যশষ্যর ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর, রংপুর িসহ গোটা উত্তরে দেখেছি, কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। এটা মনোক্রপ। ভুট্টা উৎপাদনের কারণ প্রতি মন ভুট্টায় অর্ধেক লাভ থাকে যা বেচে। বছরে তিনবার হয়। ধানে লাভ নেই, ফলে ভুট্টা করছে সবাই। এতে দুটো ক্ষতি।
প্রথম ক্ষতি, মনোক্রপ গোটা অঞ্চলের পরিবেশ ভারসাম্যকে ঝুকিতে ফেলছে। এতে পরিবেশ প্রতিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। একইরকম ফসল ফললে তা পাখি জীব যন্ত সহ সকল ধরনের প্রানি ও অনুজীবের জন্য ক্ষতিকর। পরিবেশের সাইকেলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্রপ থাকতে হয়।
দুই. খাদ্য নিরাপত্তা ব্যহত হচ্ছে। বাংলাদেশতো ইউক্রেনের মত বা আমেরিকার মত বড় দেশ না। দেশ ছোট, সে কারণে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার মনোক্রপ করলে তাতে আগামিতে কত ধরনের রোগ বালাই মানুষের হবে তা আন্দাজ করা এখনি যাচ্ছে না। পাশাপাশি ধান উৎপাদন না হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে সেটাও ভাবছি না।
সার ও ডিজেলের দাম বাড়িয়ে আমরা ধান চাষকে আরও নিরুৎসাহী করছি। এর প্রভাব পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তায় কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা আমাদের আন্দাজের বাইরে।
৫. যে অর্থ আমরা পাবো জ্বালানি তেল বেচে তা কাগজের নোট। এই কাগজের নোট দিয়ে আমরা রিজার্ভ বাড়াতে পারব না। রিজার্ভ বাড়াতে হলে দেশ থেকে আন্ডারভয়েসিং ও ওভারভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে এলসি হয়ে যে অর্থ যাচ্ছে সেটাকে রুখে দিন।
এসব কথা সহজভাবে লিখেছি। জ্বালানি সংকট নিয়ে যারা ভাবছেন তারা নিচের লেখাটি পড়তে পারেন।

About Rasel Khalifa

Check Also

যে কারণে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে বললেন সাংবাদিক ইলিয়াস

বিশিষ্ট সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২০ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *