দেশের জনগনের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আজও পরিবার হারনোর ব্যাথা তার হৃদয়ে রক্তক্ষরন করে যাচ্ছে ক্রমাগত। তিনি তার জীবনের চরম দুঃসময়ের দিনগুলিতে ভারতে বসবাস করার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। পরিবার হারনোর পর যে ভয়ঙ্কর যে পরিস্থিতি স্বীকার হয়েছিলেন তখন পাশে পেয়েছিলেন ভারতকে। দিল্লিতে বসবাসের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে যে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতে চার দিনের সফরের প্রাক্কালে একসময় দিল্লিতে নিজের বসবাসের দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার সংবাদমাধ্যম এএনআই-এর সঙ্গে আলাপকালে নিজের এমন স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় তিনি দিল্লির পান্ডারা রোডের গোপন বাসিন্দা ছিলেন। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খু/নিদের নজর এড়াতে সন্তানদের সঙ্গে ছদ্মবেশে সেখানে ছিলেন। ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পর এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দশক ধরে যে বেদনা তাকে তাড়িত করেছে সে সম্পর্কে কথা বলেছেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে ১৯৭৫ সালের ঘটনাগুলোর বর্ণনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী, যখন জার্মানিতে স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তিনি। ওই বছরের ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা ও তার বোনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। এটি ছিল একটি প্রাণবন্ত বিদায়। শেখ হাসিনার কোনও ধারণা ছিল না যে মা-বাবার সঙ্গে এটিই তার শেষ সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম অন্ধকার অধ্যায় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকায় আমি একই বাড়িতে (মা-বাবার সঙ্গে) থাকতাম। ফলে সেদিন সবাই সেখানেই ছিল। আমার বাবা, মা, আমার তিন ভাই, দুই নববিবাহিত বোন, সবাই সেখানে ছিলেন। সব ভাইবোন এবং তাদের স্বামী-স্ত্রী। তারা আমাদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে এসেছিল। আমরা বাবা, মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। আপনি জানেন, সেই দিনটিই ছিল শেষ দিন।’
সেদিন বিমানবন্দর ত্যাগের কয়েকদিন পর, ১৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনা এমন একটি খবর পান যা তার বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। তার পিতা কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ/ত্যা করা হয়। আতঙ্ক এখানেই শেষ নয়। কারণ, শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের হ/ত্যা করা হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। কোনও বাঙালি এমনটা করতে পারে এটা বিশ্বাসজনক নয়। আমরা তখনও জানতাম না কীভাবে, আসলে কী ঘটেছিল। একটি অভ্যুত্থান হয়েছে। তখন আমরা শুনলাম আমার বাবাকে হ/ত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতাম না যে পুরো পরিবারকে হ/ত্যা করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত সেই সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে খবর পাঠান, তিনি আমাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো এবং মিসেস গান্ধী আমাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা জানান। শেষ পর্যন্ত আমরা দিল্লিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কেননা, আমাদের মনে হয়েছে আমরা যদি দিল্লি যাই তাহলে সেখান থেকে দেশে ফিরতে পারবো। জানতে পারবো, আমাদের পরিবারের কতজন সদস্য এখনও বেঁচে আছেন।’
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনার কণ্ঠে এখনো সেই বেদনা প্রতিফলিত হয়। তার ভাষায়, ‘এটি ছিল খুব কঠিন সময়।’
প্রসঙ্গত, পরিবার হারিয়ে আজও পাড়ার সমান কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জীবনের যে কঠিন সময় গুলো পার করেছি সেটি ভুলার নয় এবং এ সময়ে যারা পাশে ছিল আজও তাদের কথা স্বরন করি।
“