‘নিক্সন নিজেকে সিংহ মনে করেন, তাকে আবার ভোট দিলে সে চিবিয়ে খাবে’ ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্যাহার এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী। ওরফে নিক্সন।
নিক্সন বললেন, আমি কারো মাথা খাই না। নির্বাচিত হলে জনগণের টাকা লুটপাট করে পানামা ব্যাংকে পাঠাবেন। তখন নিক্সন কাজী জাফর উল্লাহকে রাজাকার ও মোস্তাকের প্রেতাত্মা বলে অভিহিত করেন।
গতকাল (২৭ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে সদরপুর উপজেলার ধেউখালী ইউনিয়নের ওয়াজিবুল্লাহ হাওলাদার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সভা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওই এলাকার বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। বৈঠকটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শেষ হয়।
দুদিন আগে ২৫ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের মঞ্জু খানের বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত সভায় কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, নিক্সন নিজেকে সিংহ মনে করেন, ভোট দিলে। তাকে আবার, সে তোমাকে চিবিয়ে খাবে।
তার অভিযোগ ও মন্তব্যের জবাবে নিক্সন বলেন, আপনি জানেন আমি কীভাবে কথা বলি। মন খুলে কথা বলুন। এখানে আমি বুক উঁচু করে কথা বলছি, তোমার চোখে চোখ রেখে, মাথা নিচু করে নেই। আমি নির্বাচনের সময় বলেছিলাম বিদ্যুৎ পাবেন, এখন বিদ্যুতের কথা বলছি। আমি বললাম পাকা রাস্তা পাবেন, সামনে পাকা রাস্তা করে দিলাম। পাশের স্কুল ভবনটি আমার। কাজী জাফর উল্লাহ কি এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারেন? তিনি গত ৪০ বছরে যে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেন। তাই আমরা বুক উঁচু করে বিবৃতি দেব, মাথা নিচু করে বিবৃতি দেব না।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কিছু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছি। উন্নয়ন ১০০ % নয়, ৭০ %। আগামী নির্বাচনে জিতে বাকি ৩০ % শেষ করব। আমার কাজের মাধ্যমে বিগত সংসদ সদস্যের অহংকার ও অহংকার শেষ করেছি। আমার গুরু কাজী জাফর উল্লাহ সাহেব, তিনি সম্প্রতি একটি মিটিং করেছেন। কয়েকটি উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। আমি যখন তার বক্তৃতা দেখি, আমি তাকে দোষ দিই না, আমি আপনাকে দোষ দিই না, এটা আমার দোষ নয়, পাবনার পাগল গারদের দারোয়ান। দারোয়ান ঘুমাচ্ছিল বলে এই পাগলটা চলে গেল।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, আমি ১১০০ বিঘা জমি দখল করেছি। তিনি কি জানেন ১১০ বিঘা জমি কত? নিজের বাগানবাড়িতে মানুষের জমি দখল করে স্বপ্নে প্রাচীর বসিয়েছেন। তিনি মঞ্চে বলেন, নিক্সন সিং আবার নির্বাচিত হলে মানুষকে চিবিয়ে খাবেন। গত পাঁচ বছরে কাকে কামড়েছি? আসলে চাচা দুবার পরাজিত হয়ে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েছেন।
সরকার উন্নয়ন করেছে আর নিক্সন নিজের উন্নয়ন বলে দাবি করেছেন, কাজী জাফর উল্যাহার বক্তব্যের জবাবে নিক্সন চৌধুরী বলেন, আপনারা আমাকে দুইবার এমপি করছেন। আমি আপনার সন্তানের মত একটি ছোট মানুষ, একটি ছোট মানুষ. তিনি আমাকে সংসদ সদস্য করেছেন। আমার কাজ কি, আমার কাজ সেই মহান জাতীয় সংসদে গিয়ে আইন পাশ করা, আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিপদের সময় পাশে থাকুন। নিজেকে বিকশিত করুন। উন্নয়নের মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনা, আমার কাজ হচ্ছে দৌড়াদৌড়ি করে তার কাছ থেকে রাস্তাঘাট করা, তার কাছ থেকে আপনার স্কুল ভবন তৈরি করা, তার কাছ থেকে মসজিদের উন্নয়ন করা, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আপনার উন্নয়নের কাজগুলো নিয়ে এসে আপনার পাশে দাঁড়ানো। এটা আমার প্রধান কাজ.
নিক্সন বলেন, তিনি মঞ্চে বসে আমাকে চোর বলেছেন। আমি কি তোমাকে চুরি করেছি, তোমার পরিবার চোর। মঞ্চে যিনি বক্তৃতা দেবেন তিনি যেন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন, সাক্ষী দেন, মিথ্যা বক্তব্য দেবেন না। যদি নিক্সন চৌধুরী এবং তার হলুদ পাখি না থাকত, তাহলে ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ভাঙ্গা লজ্জিত হত। আমরা আপনাকে কভার করেছি। মঞ্চে এসে গঠনমূলক কথা বলুন। মঞ্চে বসে বললেন ‘নিক্সন চোর’ নিক্সন চোর। আরে আপনি কি নিক্সনকে এই এলাকার মানুষ বরখাস্ত করেননি। সে তোমাকে দুবার লাল কার্ড দিয়ে বিদায় করেছে।
সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করছেন। নেত্রী যে অবস্থা দেখেছেন, তাতে তিনি নৌকাও পাবেন না, আর মঞ্চে নাটক করলে বাবরে বাবা, ভণ্ডামির শেষ সীমা পেরিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে সে হিরো আলমের চেয়েও ভন্ড হয়ে যাবে। তার নাম বলা যেতে পারে ‘নায়ক কাজী’।
নিক্সন বলেন, এবার এ আসনের ২৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৪টি ইউনিয়নে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচন করবেন। আর কাউলিবেড়াকে বেছে নেব। এবারও কৌলিবেড়ায় এক ভোটে তাকে পরাজিত করব।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, জাফর উল্লাহ দুইবার আমার সালামের জবাব দেননি। আমি তাকে আর সালাম দেব না। কেন এত অহংকারী, নিজের টাকা আর একটা পদ নিয়ে এত অহংকার? নৌকা নিতে লজ্জা লাগে, আইসা, আপনি এমন এমপি হতে পারবেন না যেখানে ৯৫ % মানুষ নৌকা চালাতে ভালোবাসে।
কাজী জাফর উল্লাহকে ছেলে হিসেবে উপদেশ দিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ছেলে হয়ে এক টুকরো উপদেশ দেব, চাচা নৌকাকে আর অপমান করবেন না। নৌকা আমাদের হৃদয়ে, নৌকা আমাদের অহংকার, নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, একে আর অপমান করো না। ভণ্ডামি বন্ধ করো, তোমার কষ্টার্জিত অর্থ তুমি নাও
সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু খোন্দকার মোস্তাকে বিশ্বাস করতেন। কুমিল্লার বাড়ি কোথায়? শেখ হাসিনার মতো একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছেন। কাজী জাফর উল্লাহ ও খোন্দকার মোস্তাকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হারাতে চাই না, শেখ হাসিনাকে হারাতে চাই