সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পরে নারী খেলোয়াড়দের নিয়ে সারাদেশে শুরু হয়েছে তুমুল উত্তেজনা। মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে তাদের সম্পর্কে জানার এক অদ্ভুত কৌতুহল। আসলে কারা এরা কি তাদের পরিচয় এই নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় প্রতিটি খেলোয়ারের সম্পর্কে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সাতক্ষীরার ফুটবলার মাসুরা পারভীনের বাড়ির দেওয়ালে ক্রস চিহ্ন একে দিয়ে গিয়েছিল নগর উন্নয়ন বিভাগ জানা যায় খুব শীঘ্রই সেই বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে।
তবে এ বিষয় নিয়ে সুসংবাদ দিলেন আশুরার বাবা। সংবাদমাধ্যমকে জানান, দেয়াল থেকে সড়ক ও নগর উন্নয়ন (সওজ) বিভাগের দেওয়া ক্রস চিহ্নটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার বাড়ি আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে সওজা কর্তৃপক্ষের দেওয়া লাল ক্রস প্রতীকটি সরিয়ে ফেলা হয়।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এম আব্দুল আলীমের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সদর উপজেলার ১৩ নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
এর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ দাবি করে বাড়িটিকে ক্রসমার্ক করেছিল। সফজায়ি মাসুরার বাড়ি ভাঙতে পারে, পরিবার উদ্বিগ্ন শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই মাসুরাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চিহ্ন সরিয়ে ফেলা হয়।
মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, এই দাগ পেয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে তারা তা মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়। সাংবাদিকদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, যতক্ষণ না মাসুরার পরিবার বাংলাদেশ সড়ক অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত স্থান থেকে তাদের বাড়ি সরিয়ে নতুন বাড়ি নির্মাণ না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের (সওজ) কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় সাতক্ষীরা সদরের ১৩ নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, মাসুরা পারভীন শুধু সাতক্ষীরার গর্ব নয়, আমাদের লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের গর্ব। আমি ব্যক্তিগতভাবে সজের দেওয়া রেড ক্রসটি সরিয়ে দিয়েছি। সে জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কড়া নজর থাকতে হবে।
মাসুরাদের বাড়ি সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায়। সেখানে তার বাবা-মা ও দুই বোন থাকেন। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে মাসুরার বাবা রজব আলী ও মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাদের কক্ষের পেছনের দেয়ালে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে মাসুরার বাবা রজব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগিতায় আমার মেয়ের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আমাদের থাকার ব্যবস্থার অভাব মন্ত্রীর নজরে আসে। যুব ও ক্রীড়া রাজ্যের। তারপর তিনি আমাদেরকে বিশ্রামের জায়গা দেবেন বলে আশ্বাস দেন।কিন্তু আমাকে দেওয়া জমিতে ১৫ ফুট জল ছিল।অনেক দিন বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও সাহায্য পাইনি। মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ৩ লাখ টাকা দিয়ে মাঠ ভরাট করুন।তখন মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিলেন।দুই দিনের জন্য বাড়ি থেকে ঢাকায় যেতে চেয়েছিলেন।২৬ দিন পর পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি। মেয়ে।এর মাত্র দুদিন পর মাসুরা তার নতুন বাসা থেকে ঢাকায় খেলতে যায়।
নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে প্রথমে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কারণ বহিরাগত দেশের মতো বাংলাদেশের নারীদের সেভাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয় না। যদিও সরকার নারী ও পুরুষের অধিকার সমান বলে জানিয়েছেন তবুও নারীদের পিতা-মাতারা সব সময় নারীদের ঘরবন্দী রাখতে চায়। তবে সকল কিছুর বেড়াজাল অতিক্রম করে এবার বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে নেপালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করেছে আমরা নারীরাও পারি।