Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্দোলন নিয়ে পরিকল্পনা বদলাচ্ছে বিএনপি, নতুন মোড় পাচ্ছে গতিতে

আন্দোলন নিয়ে পরিকল্পনা বদলাচ্ছে বিএনপি, নতুন মোড় পাচ্ছে গতিতে

দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সরকারের ক্ষমতা থেকে নামাতে কঠোর পরিকল্পনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুগপৎ আন্দোলন আমার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে দলটি কোনভাবে সরকার হটানোর আন্দোলনে মাঠে নামবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে দলীয় সংগঠনের শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে দলটি সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে। এর গতি-প্রকৃতি কী হবে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের ধরন ও গতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং ক্ষমতায় এসে করণীয় সম্পর্কে একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে দলটি।

রাজপথে নামার আগে আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় দলটি। নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে রাখা হবে। সেই লক্ষ্যে ২২ অগাস্ট থেকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি জনগণকে রাজপথের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান আন্দোলন হঠাৎ করেই পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি পূরণে এই ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা সে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিই বোঝায় আমাদের কতটা প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। শুধু আমরা নই, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছে। একটি সফল আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আপাতত রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করতে চাই।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে এরই মধ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সমস্যা আন্দোলনের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। যেমন মিলন হ/”ত্যার পর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং আসাদ হত্যার পর আইয়ুব বিরোধী অভ্যুত্থান নতুন মোড় নেয়। আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা হল আন্দোলন কখন পরিপক্ক হবে। তবে তার আগে পরিপক্ক হলে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামব।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ভোগা’ন্তি। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেল ও সারের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সাধারণ মানুষের এই ক্ষো’ভকে কাজে লাগাতে হবে। বিএনপির প্রতি তাদের আস্থা তৈরি করতে হবে। মামলা-মোকদ্দমা এমনকি মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে জনগণের ইস্যুতে বিএনপি রাজপথে আছে এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় এসে আমরা কী করতে চাই তার পরিকল্পনাও জাতিকে জানাতে হবে। আমরাও সেটা করার পরিকল্পনা করছি। আশা করি, আমাদের কাজ দেখে জনগণের আস্থা বাড়বে এবং তারা রাজপথে আন্দোলনে নামবে। আন্দোলনে জনগণকে সঙ্গে নিলে সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় থাকা কঠিন। অতীত ইতিহাস তাই বলে। এই মুহূর্তে আমরা সেই কাজটিই করছি। গণদাবির পক্ষে কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে পড়ছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে অনেক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আন্দোলনের জন্য মাঠ প্রস্তুত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চূড়ান্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেশীয় শক্তির পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশগুলোর ভূমিকাও বিবেচনায় নিতে হবে। তারা আমাদের আন্দোলনকে কতটা সমর্থন দেবে সেটাও দেখতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রভাবশালী দেশগুলো যাতে আমাদের পাশে থাকে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও বজায় রাখতে হবে। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার পর রাজপথের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এই সরকারের পতনই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের জন্য ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আমরা প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। একই দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চও কর্মসূচি পালন করে। অন্য কথায়, এটি যুগপত আন্দোলনের সূচনা। এই আন্দোলনে সরকারের অনুগত অনেক দলকে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হবে। সবার মতামত নিয়ে কঠোর কর্মসূচির কৌশল চূড়ান্ত করা হবে। তারপর যা যা লাগবে ধাপে ধাপে আসবে। শেষ পর্যায়ে তা সরকার পতনের দফায় রূপ নেবে। আটঘাট বেঁধে চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামবেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি গণতান্ত্রিক মঞ্চের অন্যতম শরিক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও বৃহত্তর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক কর্মসূচির দাবি রাখে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে কি না তা আমি স্পষ্ট নই। আমরা প্রপার ট্রিটমেন্ট দিতে পারছি না। তবে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম তার চেয়ে এগিয়ে আছি। এখন আমরা মাঠে নেমেছি। মাঠে থাকতে বলছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে হয় না, তেমনি দিন-তারিখ দিলেই যে হয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়। কিন্তু দেশের মানুষ চায় কিছু হোক। কিন্তু ওই সময় যদি পুতুপুতু করি তাহলে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না।

উল্লেখ্য, অনেকেই বিএনপি’র নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারেক রহমানের নির্দেশেই এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে বিএনপি রাজনৈতিক বিষয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণে, তিনি কতটা সক্রিয় হতে পারবেন রাজনীতিতে, সে বিষয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে তিনি আগের মতো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসতে পারবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নেতৃত্বে তারেক রহমানই থাকবে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকর.

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *