Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্দোলন নিয়ে কৌশল বদলালো বিএনপি, নেতাকর্মীদের জানালো আশার কথা

আন্দোলন নিয়ে কৌশল বদলালো বিএনপি, নেতাকর্মীদের জানালো আশার কথা

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সময় কম, এরই মধ্যে একদিকে দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন সফল করে বহুমুখী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মাঠের কর্মকাণ্ডে সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তা কাটিয়ে এখন পুরোপুরি সংগঠিত হয়ে মাঠে নামতে চায়।

তাই দায়িত্বশীল নেতারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান এবং আরও হিসাব নিকাশ করতে চান। ১৮ ডিসেম্বরের পর আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করছেন নেতারা।

এছাড়া ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ব্যানারে কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ঢাকাসহ জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি রয়েছে। গুম ও হ”ত্যার শিকার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অংশগ্রহণ.

এদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এদিন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আজ শাহবাগে ‘নিখোঁজ হ”ত্যা, ক্রসফায়ার বন্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করুন’ শীর্ষক মানবাধিকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘মায়ের ডাক’।

একই দিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের ব্যানারে মানববন্ধন হয়। এছাড়া আত্মগোপনকারী নেতারাও মাঠে নামছেন। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এসব নেতাদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, তারাও জানেন সামনে সময় কম। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনের সফলতার দিকে। এর মধ্যে দলের নেতাদের সংগঠিত করে মাঠে নামানো এবং নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বর্জন করা দলগুলোর প্রধান দাবি হচ্ছে, সরকারের পদত্যাগ। অতীত ইতিহাস বলে, একই দাবি থাকলে তা একমঞ্চে কিংবা ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনের পথেই হাঁটে রাজনৈতিক দলগুলো। এবং তা সফল হয়। সে চেষ্টাই বিএনপি করছে। ইতোমধ্যে অনেক দল ইতিবাচক মনোভাবও পোষণ করেছে। তাদের ধারণা, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে। পাশাপাশি সরকারের ওপর গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ আরও বাড়বে। সবকিছু বিবেচনায় সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ছে। আন্দোলনও তীব্র হবে। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার তাই তারা করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘দেখুন অবরোধের পেছনে আমাদের মূল বিষয় হলো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। প্রথমত, আমরা আওয়ামী লীগের একদলীয় সরকার ও গণতন্ত্র হরণের প্রতিবাদ করছি। দ্বিতীয়ত, শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ; বিগত এক বছর ধরে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা এবং ছয় হাজার ইউনিয়নে পদযাত্রা করেছি।

এগুলো সবই ছিল শান্তিপূর্ণ। তাই এখনো শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের অংশ হিসাবে আমাদের অবরোধ-হরতাল চলছে। অভিযোগ থাকতে পারে বিএনপি হরতাল-অবরোধ করতে পারছে না। এর জবাব হলো-আওয়ামী লীগ যেভাবে লগি-বৈঠা নিয়ে হরতাল করে, বিএনপি তাতে বিশ্বাস করে না। ২০১৪ আর ২০২৪ সাল এক কথা নয়। সমাজে বিবর্তন ঘটেছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামো বদলেছে, মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন এসেছে। তাই ১৯৫২ কিংবা ১৯৬৯ দূরে থাক, ১৯৯০ সালের আন্দোলনের সঙ্গেও বর্তমান অবস্থা মেলানো সঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি কি নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছে নাকি আওয়ামী লীগ মিস করেছে? আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে সরকার। তারা পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনে এসেছিল, এখন তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। সরকার নির্বাচনে গন্ডগোল করেছে। মামলা ও গণগ্রেফতার করেও তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, “‘দলের নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা ও গ্রেফতার উপেক্ষা করে কর্মসূচি সফল করছেন। একেকটা সময় একেকটি ডাইমেনশন আসছে। দল ভেঙে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার সরকার যে অপকৌশল নিয়েছিল তা ব্যর্থ করে দিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। সুতরাং আরেকটা ডাইমেনশন সৃষ্টি হবে। সময়ই বলে দেবে কখন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে কিভাবে আন্দোলন করতে হয়। সেই সময় সব দল-মত, ডান-বাম, ইসলামি, মধ্যপন্থি সবাই এক মোহনায় এসে সরকারের সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসবে। সরকারের সব কূটকৌশল পরাস্ত করে আন্দোলনের বিজয় ঘরে তুলবে।’

সূত্র জানায়, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সাফল্য মূল্যায়ন করছেন। একই সঙ্গে যেসব জেলায় নেতাকর্মীরা তুলনামূলকভাবে কম মাঠে নেমেছে সেগুলোও চিহ্নিত করছে। কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকেও সেসব জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে কোনো সমন্বয়ের অভাব বা দুর্বলতা না থাকে। তবে কেন্দ্রীয় অনেক নেতার ভূমিকা নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ অন্তত আট জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতাকে ফোন করলেই অন্য কেউ তা ধরে বলছেন, তিনি আত্মগোপনে থেকে সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসলে ওই নেতা সমন্বয়ের দায়িত্বে নেই। এটি তার মাঠে না নামার একটি কৌশল। অনেকে আবার এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামও ব্যবহার করছেন।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ঢাকা মহানগর নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবা হচ্ছে। কারণ তৃণমূল অতীতে অভিযোগ করেছিল, ঢাকায় আন্দোলন সফল হয়নি, তাই সফলতা ঘরে তোলা যায়নি। যদিও এখন তারা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর, রাস্তায় গ্রেফতার এমনকি গু”লিও করছে। আগামী দিনে কৌশল পরিবর্তন করে ঢাকার আন্দোলন জোরদার করা হচ্ছে। যার প্রতিফলন দেখা যাবে শিগগিরই।

আগামীকাল ঢাকাসহ জেলা সদরে মানববন্ধন: এদিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামীকাল ঢাকাসহ জেলা সদরে নিখোঁজ-হত্যাকারী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করবে বিএনপি। এ কর্মসূচির ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। তবে নিহ”তের পরিবারের সদস্যদের আরও জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুম ও খু”ন হওয়া নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ঢাকা মহানগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যারা গুম ও খু”ন হয়েছেন। সকাল ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হবে।ঢাকা মহানগর বিএনপি এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলায়ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকার সকল বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করলে অন্যায়ের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল হবে।

তিনি ঢাকাসহ দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, গুম-খুন হয়েছে সেসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মানববন্ধন করার আহ্বান জানান।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *