Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্দোলন জোরদার করতে এবার নতুন ছক কষলো বিএনপি

আন্দোলন জোরদার করতে এবার নতুন ছক কষলো বিএনপি

ফের চেনা ছকে রাজনীতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ খোশমেজাজে আছে। অন্যদিকে আন্দোলন নিয়ে রাজপথে বিএনপি। দলটি দীর্ঘদিন ধরে জোটের শরিকদের নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নির্বাচনের আগে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন ও কট্টরপন্থী নীতি অনুসরণ করেও সাফল্য পায়নি বিএনপি।

এরপরও হাল ছাড়েননি দলের শীর্ষ নেতারা। হতাশা কাটিয়ে দলটি তৃণমূলে ফিরছে কর্মীদের শক্তিশালী করতে। নীতিনির্ধারকরা একতরফা দাবিগুলিকে আরও শক্তিশালী এবং আরও সুসংহত করার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। ‘ঐক্যের প্রতি আস্থা’ রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতারা লক্ষ্য অর্জনে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে, গণপ্রবাহ সৃষ্টির পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে একমত। তাদের মতে, টানা তিন মাস ‘আত্মগোপনে’ থাকার পর শনিবার রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সন্তোষজনক উপস্থিতিতে আবারও আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের রাজপথে চলমান আন্দোলন চলতে থাকবে। এটা চালিয়ে যাবে দল। কোন সময়ে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের একমাত্র দাবি সরকারের পদত্যাগ। সেই দাবিতে আমাদের নেতাকর্মীদের করণীয় বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। দল শক্তিশালী হচ্ছে। নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছেন। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে, শুক্রবার ও শনিবারের কালো পতাকা মিছিলে। সরকারের নানা দমন-পীড়ন সত্ত্বেও কর্মীরা সন্তোষজনকভাবে কর্মসূচি সফল করেছে। অনেক নেতাকর্মীর হতাশা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। আমাদের একটাই কথা, দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করা, সুশাসন ফিরিয়ে আনা, বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা। এজন্য যা যা করা দরকার বিএনপি করবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির হাজারো নেতাকর্মী কারাবন্দি। মামলা, হামলায় জর্জরিত লাখো কর্মী-সমর্থক। এখনো বাড়িঘর ছাড়া অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে এ মুহূর্তেই কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি। এজন্য কারাবন্দি নেতাদের মুক্তিতেই জোর দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল ও তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে মনোযোগী তারা।

সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, ৭ জানুয়ারির পর বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের বৈঠক হয়েছে। একদফার আন্দোলন চলমান থাকলেও এসব বৈঠকে আন্দোলনকে মূল্যায়ন করা হয়। প্রায় বৈঠকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মী ও দলের নানা সংকটের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এসব সংকট কাটিয়ে আন্দোলন চাঙা ও নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা, থানা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দল ও সংগঠনের দুর্বলতা শনাক্ত করে শিগগিরই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে গতিশীল করা হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পদ-পদবিতে থেকেও যারা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় কিংবা গুরুতর অসুস্থ, তাদের জায়গায় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে বিএনপি। একই সঙ্গে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করতে কাউন্সিলিং করবেন দায়িত্ব প্রাপ্তরা।

তৃণমূল থেকে একসঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। প্রথমে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে লুকিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে রাজপথে আনা হবে। তবে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি অনেকটাই ছত্রভঙ্গ। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় হতাশ অনেকেই। এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাতে কাজ করছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। এ কাজের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ভালো-মন্দ, মামলা-হামলা জানতে ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু করেছেন। দলের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠকের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানান, সাংগঠনিক কার্মকাণ্ডের পাশাপাশি তৃণমূল থেকে দ্রুত সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্য মাঠের নেতাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ২ দিনের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সারা দেশে জেলা সদরে এবং পরদিন শনিবার ঢাকা মহানগরসহ প্রত্যেক মহানগরে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতারা আশাবাদী হয়ে উঠছেন। একই দাবিতে ৩০ জানুয়ারি সারা দেশে জেলা ও মহানগরের প্রত্যেক থানা-উপজেলা আর পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির বাইরে একেবারে তৃণমূল থেকে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গণঅবস্থান, গণসমাবেশ, সমাবেশ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বড় সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

কয়েকটি জেলার বিএনপির নেতারা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন মাঠের সক্রিয় নেতারা। নেতৃত্বের সাফল্য এবং ব্যর্থতা খুঁজে বের করা। এছাড়া ধাপে ধাপে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে মনোবল চাঙ্গা রাখতে কাজ করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে এখনো নেতাকর্মীদের অনেক আন্তরিকতা রয়েছে। যে কোনো ঝুঁকিতে তারা যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর তা আবারও প্রমাণ করেছে।

দুই দিনব্যাপী কালো পতাকা মিছিল সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ৩০ জানুয়ারি সারাদেশের মানুষ সরকারকে কালো পতাকা দেখাবে। তিনি বলেন, জনগণ গণতন্ত্র হারিয়েছে। কথা বলতে ভয় পায়, মতামত প্রকাশ করে। কারো কোন স্বাধীনতা নেই। সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আমাদের নেতাকর্মীরা এ জন্য অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নেমেছে।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা মাঠের কর্মসূচিতে আছি। আমাদের ও জনগণের দাবির কথা বলছি। এটাকে আরও এগিয়ে নিতে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। এছাড়া সাংগঠনিক শক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কারণে শনিবারের কালো পতাকা মিছিলে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নেতাকর্মীদের শক্ত রাখতে একের পর এক কর্মসূচি আসছে। আরো আসবে। ধীরে ধীরে আবারও এক পক্ষের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *