Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Politics / আন্দোলনে গতি আনার লক্ষ্য, বহিষ্কৃতদের গণক্ষমায় বিএনপি

আন্দোলনে গতি আনার লক্ষ্য, বহিষ্কৃতদের গণক্ষমায় বিএনপি

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনকে সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরে সব স্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্য চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের সব ধরনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিয়ে দলকে শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য। চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আগে সব মতভেদ ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করতে চায় দলের হাইকমান্ড। এ জন্য সাধারণ ক্ষমার আদলে সকলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে সবাইকে দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি একবারে বা পর্যায়ক্রমে ঘটতে পারে। যার এখতিয়ার শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। দলের নীতিনির্ধারণী মহলের একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দলের মধ্যে কোনো ধরনের ক্ষোভ, দ্বন্দ্ব ও বিভাজন রাখতে চায় না বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে রাজপথের এই প্রধান বিরোধী দল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগসহ বিভিন্ন কারণে ইতোপূর্বে বহিষ্কৃত প্রায় আড়াইশ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে এসব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের দুই সহস্রাধিক নেতা তাদের ভুল স্বীকার করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জমা দেন। এছাড়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে দলটি। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সক্রিয় নেতাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বহিষ্কৃত অধিকাংশ নেতা দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা এগোয়নি। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলের বৃহত্তর স্বার্থে দলত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। অন্যথায় এসব নেতা আন্দোলনে সক্রিয় হতে পারবেন না। প্রবাস প্রত্যাহারের অপেক্ষায় স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী অনেক নেতা রয়েছেন। তাদের দলে ফিরিয়ে আনলে দল শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান দল ও সংগঠনের যে দুই শতাধিক নেতা বর্জন প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে কৃষক দল, ছাত্রদল, যুবদলসহ মূল দলের অনেক নেতা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। জনবল নিয়ে দলের। প্রায় প্রতিদিনই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাদের অনেকেরই কয়েক বছর ধরে নির্বাসনের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রত্যাহার করা হয়নি। কিছু বহিষ্কৃত প্রভাবশালী নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়।

এসব প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে ছোটখাটো ভিত্তিহীন অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় একটি বড় অংশকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে দেখা বা অনুগ্রহ বিনিময়ের অভিযোগে আরও অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নাসিরের মতো অনেক শিক্ষিত উদীয়মান নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তার এলাকায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার অপরাধে। পার্টি নির্বাসিত দেশের কথা মাথায় রেখে তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে রাজধানী ঢাকাসহ নিজ এলাকায় অসংখ্য কর্মী-সমর্থকসহ দলের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে তার এই ভূমিকার প্রশংসা করতে দেখা গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলে নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত শতাধিক নেতা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আবেদনের পর স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অতীতের অপরাধের ধরন ও বর্তমান কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে এমন উদীয়মান নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ও আন্দোলনে সবাইকে আবারো একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আগামী দিনে আন্দোলনকে বেগবান করতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব অর্পিত।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি বিবেচনা করলে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বহিষ্কৃতদের অনেকেই ভুলের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও তাদের দলে ফিরিয়ে আনতে রাজি হয়েছেন। যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার শুরু হবে।

জানা গেছে, বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লাগাতার সমাবেশ ও রোডমার্চ কর্মসূচি চলবে।কিন্তু কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতা। বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বহিষ্কৃত মো. এসব নেতার অর্ধেকের বেশি স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়। আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এছাড়াও মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত। স্থানীয় নেতারাও এই নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছেন। কারণ এবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা দলে পরীক্ষিত হয়েছেন, কিন্তু আবেগের বশে ভুল করেছেন, তারা এখন ফিরে এলে দলে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে। এ জন্য দলটিকেও তাদের স্বার্থের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

About Zahid Hasan

Check Also

‘আ.লীগ রঙ দেখছে, কিন্তু রঙের ডিব্বা দেখেনি’ দল যে সিদ্ধান্ত নেবে মাথা পেতে নেব

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেছেন, বিএনপি যদি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়, তাতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *