আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার একদিন এগিয়ে যাচ্ছে, মানে বাংলাদেশ একদিন পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলন সফল হবে।
বিএনপি নেতাদের মুক্তি ও আন্দোলনের বিষয়ে রুমিন ফারহানের মতামত নেওয়া হয়।
মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এটাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের যেসব মামলায় আটক করা হয় তার সবই ছিল মিথ্যা, ভিত্তিহীন। ইচ্ছাকৃত সাজানো মামলায় নেতাদের আটক করা হয়, যাতে নির্বাচনের আগে আন্দোলন দমানো যায়। বিএনপি যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই সরকার এসব মামলা সাজিয়েছিল। যার পেছনে অন্য কারণ বা ঘটনা ছিল না।”
বিএনপির আন্দোলনে নেতাকর্মীরা হতাশ। মানুষ বিরক্ত হচ্ছে কি না? রুমিন বলেন, “বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশ হলে ১৭ বছর ধরে নিষ্ঠুর নির্যা”তন সহ্য করে শক্তিশালী দল হিসেবে টিকে থাকতে পারতো না। বিএনপি নেতারা গুম হবেন, খু”ন হবেন, মিথ্যা মামলায় জেল খাটবেন, চাকরি থাকবে না বা হবে না, ব্যবসায় ক্ষতি হবে সব জানার পরও একজন কর্মী বিএনপি ছাড়েননি বরং আগের থেকে আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। তাই হতাশ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
“আমরা জানি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ কাজ নয়। একটি স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে টিকে থাকে এবং তাদের সাথে লড়াই করা কঠিন এবং দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।’
গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কিছু নিয়ম আছে। তাদের অনুসরণ করলে আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব। সরকার উৎখাতের আন্দোলনের কৌশলে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এই ভুলগুলো কাটিয়ে উঠলে আমাদের খুব একটা সমস্যা হবে না।
বিএনপি সরে যায়নি ঠিক, তাতে সরকারের কিছুই যায়-আসে না। তাহলে বিএনপির এ আন্দোলন বা ঐক্যবদ্ধ থাকার সফলতা কী?
‘আমার দাবি সঠিক ও গণমানুষের তা প্রমাণ করতে পেরেছি। এটি আমাদের প্রথম সফলতা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে ঠিক, কিন্তু মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। সরকারের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। আওয়ামী লীগের পতন হলে বোঝা যাবে তারা দলটিকে কীভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের কাছে আসলে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অস্ত্রের জোরে টিকে আছে।’
আওয়ামী লীগের পতনের কথা বলছেন কিন্তু জনগণ কি বিশ্বাস করে যে বিএনপির আন্দোলনের কারণে সরকারের পতন হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন আওয়ামী লীগের পতন হবে এ বিশ্বাস করানোর দায়িত্ব আমাদের। সরকার ফেল করবে এটি হয়তো দৃশ্যমান করতে পারেনি। একটি স্বৈরাচার সরকারকে ফেলে দেওয়া মুখের কথা নয়। প্রতিটি মানুষকে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করার বিষয় আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে সফল হবোই।’
আন্দোলনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। সরকার পতনের আন্দোলনে জনগণ আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে কেন? রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মানুষ আস্থা রাখবে কারণ আমরা আন্দোলন করছি মানুষের জন্য, আন্দোলন করছি মানুষের অধিকারের জন্য। একজন নাগরিকের মৌলিক ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি। এ কারণে মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে।
আপনি কি মনে করেন বিএনপির আন্দোলনে কোনো ত্রুটি ছিল বা আছে? জবাবে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কিছু নিয়ম আছে। তাদের অনুসরণ করলে আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব। সরকার উৎখাতের আন্দোলনের কৌশলে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এই ভুলগুলো কাটিয়ে উঠলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না।”
বিএনপির মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে কী বলবেন? এ প্রশ্নে রুমিন বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি মনে করি না বিরোধী দলগুলোর কোনো ব্যর্থতা আছে। সবাই তাদের সেরাটা দিয়েছে। তবে এটা ১৭ কোটি মানুষের অধিকারের লড়াই। আপনার অধিকার আদায়ে আমি বারবার রক্ত দিলে সার্বিক সফলতাটা আসে না।’
আবারও আন্দোলনের ঘোষণা। আন্দোলনের রূপরেখা সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারবেন কি? আন্দোলনের রূপরেখা সম্পর্কে এই মুহূর্তে আমার কোনো ধারণা নেই। রূপরেখা নির্ধারণ করবেন নীতিনির্ধারকরা।’
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ইতিহাসের পাতায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের ত্যাগ ও অবদানকে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ও করবে। মানুষ বিভিন্ন কারণে কারণে হতাশ, দুঃখে আছে। কিন্তু দিনশেষে খালেদা জিয়ার নীতির ওপরই ভরসা রাখছেন। তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসই হবে আমাদের ইতিহাস।